মাত্র ৫ টাকা ভিজিটে রোগী দেখেন কালনার চিকিৎসক গৌরাঙ্গ গোস্বামী


কালনা: এ রাজ্যে চিকিৎসার পরিষেবা নিয়ে রোগীর পরিবারের অভিযোগের শেষ নেই৷ গাফিলতির অভিযোগে বেশিরভাগ সময়ই কাঠগড়ায় তোলা হয় চিকিৎসকদেরই৷ এমনকী, রোগীমৃত্যুর পর ডাক্তারদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেন না অনেকেই৷ তাঁদের বক্তব্য, রোগীকে সুস্থ করে তোলা নয়, যেনতেনপ্রকারে রোজগার করাটাই নাকি চিকিৎসকদের লক্ষ্য৷ কিন্তু, সকলেই যে তেমন নন, তার উজ্জ্বল উদাহরণ পূর্ব বর্ধমানের কালনার গৌরাঙ্গ গোস্বামী৷ প্রতিদিন দুশোরও বেশি রোগী দেখেন এই চিকিৎসক৷ ভিজিট মাত্র পাঁচ টাকা! আর কেউ যদি সেটুকু টাকাও দিতে না পারেন, তাহলেও চিকিৎসা করতে আপত্তি নেই গৌরাঙ্গবাবুর৷ উলটে প্রয়োজনে নিজের পকেটে টাকা খরচ করে রোগীর পথ্যেরও ব্যবস্থা করে দেন তিনি৷

চিকিৎসক গৌরাঙ্গ গোস্বামীর বাড়ি কালনার ফটকদ্বার এলাকার৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে 'গরিবের ডাক্তার' নামে পরিচিত তিনি৷ দিনরাত খোলা ডাক্তারবাবুর চেম্বার৷ সেরকম গুরুতর কিছু হলে আবার রোগীরা পৌঁছে যান বাড়িতেও৷ তবে বাড়িই হোক কিংবা চেম্বার, ভিজিট পাঁচ টাকা! স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগে যখন অন্য চিকিৎসকরা ৫০ টাকা ভিজিট নিতেন, তখনও ৫ ভিজিটেই রোগী দেখতেন গৌরাঙ্গ গোস্বামী৷ তারপর ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে দিয়েছে৷ ভিজিট আর বাড়েনি৷ কাটোয়া, নবদ্বীপ, এমনকী, শান্তিপুর থেকেও রোগীরা ভিড় করেন এই দরদী এই চিকিৎসকের চেম্বারে৷ সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দম ফেলার সময় থাকে না গৌরাঙ্গবাবুর৷ রোগীদের একটাই কথা, আজকের দিনে অমন চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর৷ কম ভিজিট বলে নয়, ভাল চিকিৎসা পেতেই গৌরাঙ্গ গোস্বামীর কাছে আসেন তাঁরা৷ এখানেই শেষ নয়৷ কেউ যদি ৫ টাকা ভিজিটও দিতে পা পারেন, তাহলেও সমস্যা নেই৷ উলটে নিজের পকেটে টাকা খরচ করে পথ্যেরও ব্যবস্থা করেন চিকিৎসক গৌরাঙ্গ বিশ্বাস৷

ডাক্তারবাবুর বয়স প্রায় সত্তর বছর৷ এমবিবিএস পাস করেছেন ১৯৭২ সালে৷ দাদু মোহনীমোহন গোস্বামীও ছিলেন চিকিৎসক৷ নাতি গৌরাঙ্গ বিশ্বাস বলেন, 'দাদু প্রয়াত মোহনীমোহন গোস্বামীর কাছ থেকে মানুষের সেবা করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি৷ যতদিন বাঁচব, গরিব মানুষের চিকিৎসা করে যাব৷'  এখনকার চিকিৎসকদের ভূমিকায়ও ক্ষোভ উগরে দিলেন কালনার এই দরদী চিকিৎসক৷