আর যেন প্রতারিত হতে না হয়


এ যেন প্রতিযোগিতা। কৃষকের প্রতি কার দরদ বেশি, কৃষকের জন্য কে কত উদ্বিগ্ন, কৃষকের দুর্দশায় কার প্রাণ বেশি কাঁদে— প্রমাণ করার প্রতিযোগিতা। আপাত দৃষ্টিতে এই প্রতিযোগিতা অস্বাস্থ্যকর নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার বিষয় যদি হয়ে ওঠে নাগরিকের পাশে দাঁড়ানো, তা হলে সমস্যা কীসে?  কিন্তু, সামনে নির্বাচন, তাই সংশয় জাগছে। ভোট মিটলেই ছবিটা বদলে যাবে না তো? আশঙ্কা হচ্ছে।

কৃষকের উন্নতিকল্পে সম্প্রতি বড় পদক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ধান-সহ বিভিন্ন শস্যের সহায়ক মূল্য অনেকখানি বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। এই ঘোষণা যদি রূপায়িত হয়, ভারতের কৃষিক্ষেত্র খুবই লাভবান হবে, সংশয় নেই।

কিন্তু, সামনে নির্বাচন। তাই একই রকম ঘোষণা এল মোদীর প্রতিপক্ষ শিবির থেকেও। বিধানসভা নির্বাচনের আগে কর্নাটকে জেডিএস-এর প্রতিশ্রুতি ছিল, কৃষকের যাবতীয় ঋণ মকুব করা হবে। কথা রাখলেন এইচ ডি কুমারস্বামী। কর্নাটকের জেডিএস-কংগ্রেস সরকার তার প্রথম বাজেট প্রস্তাবেই জানিয়ে দিয়েছে, ৩৪ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বোঝা স্বীকার করে দু'লক্ষ টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মকুব করা হচ্ছে। যে কৃষকরা ঋণ শোধ করছেন, তাঁদের জন্য আবার আর্থিক প্রোৎসাহনের ঘোষণা করা হয়েছে।

কেন্দ্রে বিজেপির সরকার। তারা এক রকম ভাবে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে চাইল। কর্নাটকের বিরোধীদের সরকার। তারা আর এক রকম ভাবে কৃষককে সহায়তা করার কথা ঘোষণা করল। এই প্রতিযোগিতা অস্বাস্থ্যকর নয়। এই প্রতিযোগিতা ইতিবাচক। কারণ, রাজনৈতিক ফসল যার ঘরেই উঠুক, লাভের অঙ্ক জমা হবে কৃষকের খাতাতেই। তাই উচ্ছ্বসিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কিন্তু, উচ্ছ্বাস প্রকাশের আগের মুহূর্তেই একটা সংশয়ও যেন সঞ্চারিত হচ্ছে। যা কিছু ঘোষিত হচ্ছে, সে সবের সুফল শেষ পর্যন্ত কৃষকের ঘরে উঠবে তো? প্রশ্ন জাগছে।

প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস, অঙ্গীকার গত সাত দশকে অনেক দেখেছে ভারত। অনেক প্রতিশ্রুতিই পূরণ হয়েছে। কিন্তু, অনেক কিছুই আবার বিপুল আশা জাগিয়েও মরীচিকা হয়ে গিয়েছে। এই মরীচিকারা সাধারণত প্রাক-নির্বাচনী মরশুমেই হানা দেয়। শস্যের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি বা কৃষি ঋণ মকুবের ঘোষণাটা সেই প্রাক-নির্বাচনী মরসুমেই হচ্ছে। আগামী বছর দেশজো়ড়া নির্বাচন। বিজেপি বনাম সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ— এমন এক সমীকরণ গঠনের চেষ্টা এখন থেকেই জোড়কদমে চলছে সে নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। তাই ভোটের ঘণ্টাটা একটু আগেই যেন বেজে গিয়েছে এবার, একটু আগেই যেন ভোট মরসুম চলে এসেছে এ দফায়। সেই মরসুমেই কৃষক দরদ দেখালেন মোদী। সেই মরসুমেই নিজেদের কৃষক-মিত্র প্রমাণ করতে চাইল কংগ্রেস-জেডিএস। সংশয় সেই কারণেই। আবার মরীচিকার মুখে প়ড়তে হবে না তো?

আবার বলি, গত সাত দশকে প্রতিশ্রুতি অনেক পেয়েছি আমরা। কখনও 'গরিবি হঠাও', কখনও 'সম্পূর্ণ ক্রান্তি', কখনও 'বছরে দু'কোটি কর্মসংস্থান' বা ' ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা' বা 'অচ্ছে দিন'। সে সবের কতটা বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে, গোটা দেশ তা জানে, তাই প্রাক-নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বা ঘোষণা দেখলেই এ দেশ এখন সন্দিহান হয়। কেন্দ্র হোক বা কর্নাটক রাজ্য, যা ঘোষিত হয়েছে, ঠিক মতো তার রূপায়ণ ঘটলে ভালই হবে। কিন্তু, আরও এক বার প্রতারিত হতে কারও ভাল লাগবে না। নরেন্দ্র মোদী বা কুমারস্বামী-সিদ্দারামাইয়া, প্রত্যেকেই সে কথাটা মনে রাখবেন আশা করা যায়।