সব সময় নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেন ? তবে সাবধান !

পরিবারের প্রধান পুরুষ যদি সবার ওপর কর্তৃত্ব করতে ভালবাসেন, সব সময় নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেন তবে সেই পরিবারে শিশুদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ কখনওই ঠিকমতো হয় না। এই নিয়ে রইল একটি আলোচনা।



আমার বয়স ১৭ বছর। আমার বাবা ভীষণ ডমিনেটিং। সবার উপর কর্তৃত্ব ফলাতে চান। আমরা কী করব না করব, সমস্ত সিদ্ধান্ত উনি একাই নেন। কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা করেন না। ওঁর আমাদের উপর একফোঁটা বিশ্বাস নেই এবং মনে করেন আমরা কেই কিছু জানি নি। যদি আমি কখনও তর্ক করতে যাই, প্রচণ্ড বকাঝকা করেন যেন আমি এখনও ছোট বাচ্চা। ওঁর এই আচরণের কারণে আমি বাবার উপর সমস্ত আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ওঁর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছেই করে না। আমি সবসময় ওঁর বিরুদ্ধাচরণ করি, উনি যেখানে যান আমি সেখানে যাই না। কারও সঙ্গে সহজে মিশতে পারি না, কারণ মনে হয় যা বলব ভুল বলব। নিজের উপর ভরসা করতে পারি না। আত্বিশ্বাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কী করব বুঝতে পারছি না। কীভাবে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাব?

পরিবারের প্রধান পুরুষ তা সে স্বামী অথবা বাবা যেই হোক, তিনি যদি জমিদারী মেজাজে চলেন, সবার ওপর কর্তৃত্ব করতে ভালবাসেন, যদি সব সময় নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেন, পরিবারের অন্য কাউকে গুরুত্ব না দেন, পান থেকে চুন খসলেই তাদের ওপর খড়্গহস্ত হয়ে ওঠেনতবে সেই পরিবারে শিশুদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ কখনই ঠিকমতো হয় না। শুধু ছেলেমেয়েই নয়, তাদের মা অথবা দাদু-ঠাকুরমার মতো মানুষদেরও আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং অসহায়তার মধ্যে তাদের দিন কাটাতে হয়।

যে সব বাবা একটু রাশভারী ধরনের, অনেক সময় তারা মনে করেন, শিশুকে কড়া শাসনে না রাখলে সে বয়ে যাবে। বাবার এই ধরনের আচরণে শিশুর মধ্যে হীনম্মন্যতা ছাড়া পরনির্ভশীলতাও দেখা দেয়। পরবর্তীকালে সে অতিমাত্রায় লাজুক বা অন্তর্মুখী হয়ে উঠতে পারে। এই সব শিশুরাই কৈশোরে পৌঁছে বাবার প্রতি বিতৃষ্ণায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। সব সময় সমালোচনা, স্বাধীনতায় অযথা হস্তক্ষেপ ছেলেমেয়েরা মেনে নিতে পারে না বলেই বাবার সঙ্গে তর্ক জোড়ে, মারমুখী হয়ে ওঠে।

বড় হয়ে ওঠার সময় প্রত্যেকের একজন রোল-মডেল থাকাটা জরুরি। এটার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেখা দেয় কৈশোরে। জন্মের পর যে কোনও শিশু, তা সে ছেলে অথবা মেয়ে যাই হোক, তার সবচেয়ে প্রয়োজন মাকে। মা-ই তার নির্ভরতার প্রধান জায়গা। বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে বাবা এবং পরিবারের অন্যরাও শিশুটির কাছের মানুষ হয়ে উঠলেও মায়ের প্রতি নাড়ীর টানটা থেকেই যায়। কৈশোরে গিয়ে অবস্থাটা পালটায়। এই সময় ছেলেমেয়েদের শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনের ভিতর যে পরিবর্তন আসে তার প্রকাশ ঘটে তাদের লিঙ্গচেতনায়। ছেলেটি যে একজন ছোটমাপের পুরুষ এবং মেয়েটি যে নারীসেই বোধটা তখনই মনের মধ্যে গেড়ে বসে। মায়ের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা ছেলের মধ্যে শুরু হয় এই সময়েই। কৈশোরের দিনগুলোয় যে ছেলেটি তার বাবাকে যেমনভাবে সে চায় অথচ তেমনভাবে কাছে পায় না। বাবাকে তার আদর্শ পুরুষ হিসেবে মেনে নিতে পারে না। বাবাকে এড়িয়ে চলতেবাবার থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হয়শক্তিশালি-স্বনির্ভর হয়ে ওঠাটা তার পক্ষে বেশ দুরুহ হয়ে ওঠে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা কম কারণ কৌশোরে পৌঁছেও মা-ই তার কাছে রোল-মডেল হিসেবে থাকেন। তবে বাবার সামন্ত্রতান্ত্রিক আচরণের ফলে মা-ও যদি কুঁকড়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে মেয়েটির ব্যক্তিত্বের বিকাশ যথাযথ নাও হতে পারে।

১৭ বছরের যে কিশোরটি আজকের চিঠিটি লিখেছে তাকে বলব, বাবা যদি তোমার আদর্শ পুরুষ না হয়ে থাকেন, তোমার চারপাশের অন্য পুরুষদের মধ্যে তোমার আদর্শ মানুষটিকে খুঁজে পাবার চেষ্টা করো। সেই মানুষ যিনি তোমার দোষ না ধরে গুণের কথাটি বলেন, সেই মানুষ যিনি তোমার ওপর আস্থা রাখেন, যার পাশে থাকলে তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়ে। যেহেতু আর ক'দিন পরই তুমি সাবালক হবে, স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার কাজটা এখনই শুরু করে দাও। বাবার সঙ্গে তর্ক করা, বাবার প্রতি আক্রোশ দেখানো বন্ধ করে বাবার আচরণের বিষয়টা আস্তে আস্তে মন থেকে সরিয়ে ফেলো। যদি সম্ভব হয়, স্কুলের পড়া শেষ হলে কলেজের পড়া হোস্টেলে থেকে পড়ো। অনেক অনেক বন্ধু বানাও এবং তাদের কাছে নিজের পজিটিভ দিকগুলোকে তুলে ধরো। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার এটা সেরা উপায়।