তালিকায় নেই নাম, সংসার ভাঙার আশঙ্কার সাড়ে ৪৮,০০০ মহিলা!


প্রথম তালিকা থেকে যে দেড় লক্ষ নাম চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় বাদ পড়ল, তার মধ্যে ৪৮,৪৫৬টি নাম বিবাহিত মহিলাদের। কারণ, পর্যাপ্ত শংসাপত্র ও লিংকেজ নথির অভাব। অর্থাৎ তাঁরা বিয়ের পরে স্বামীগৃহে এলেও বিয়ের আগে কোথায় ছিলেন, জন্ম কোথায়, মা-বাবার নাম, ১৯৭১ সালের আগের এনআরসি বা ভোটার তালিকায় রয়েছে কি না— তার প্রমাণ চাওয়া হয়েছিল। সমস্যা সেখানেই। কারণ গ্রামগুলি, বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় অনেক মেয়েই স্কুলে যায়নি। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জন্ম না হওয়ায় মেলেনি জন্মের শংসাপত্র। বদলে তাঁরা জমা দিয়েছিলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট। কিন্তু গৌহাটি হাইকোর্ট রায় দেয় পঞ্চায়েত নথি প্রামাণ্য বলে গণ্য হবে না। গত ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট জানায় পঞ্চায়েতের দেওয়া সার্টিফিকেট বিবাহিতাদের ক্ষেত্রে সহযোগী নথি হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু তা খুব ভাল করে পরীক্ষা করতে হবে।

তালিকায় নাম নেই বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পালের স্ত্রী অর্চনা পালেরও। দিলীপ বাবু এখন ৭ অগস্টের অপেক্ষায়‌। তাঁর কথায়, ''নথিপত্র সবই দেওয়া হয়েছিল, কেন এল না, এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। দাবি ফর্ম পূরণ করে সব নথি আবার দিতে হবে, ওই যা।'' তবে গোয়ালপাড়ার বাদলামারির সাবিনা বেগম, ধুবুড়ির মতিয়ারি বিবি, ছয়গাঁওয়ের মেহেরুন্নেসা বিবিদের (নাম পরিবর্তিত) কারও পঞ্চায়েতের নথিই কাজে দেয়নি। সহযোগী নথির পাশাপাশি তাঁদের হাতে বিয়ের সার্টিফিকেট ছিল না। কেউ আবার বাবার সঙ্গে সম্পর্কই প্রমাণ করতে পারেননি। কারও বাবা-মা মৃত। ঘরে খুঁজে পাওয়া যায়নি অতীতের কোনও প্রামাণ্য নথি। ধুবুড়ি-গোয়ালপাড়ার চরবাসী অনেকেরই জমির পাট্টা নেই। সেখানকার অনেক মহিলার নাগরিকত্ব প্রমাণের অন্য কোনও উপায়ই নেই।

ফলে ওই সাড়ে ৪৮ হাজার পরিবার এক ভাঙনের আশঙ্কায়। তালিকায় নাম না থাকলেই স্ত্রীরা বিদেশি হয়ে যাবেন। তা হলে ঠিকানা 'ডিটেনশন' শিবির। অনেকের বেশ কয়েক জন ছেলেমেয়ে। মাকে ধরে নিয়ে গেলে সন্তানদের কী হবে, চিন্তায় স্বামীরা। অনেক বৃদ্ধার নামও বাদ পড়েছে। তাঁদের কাছে অতীতের কোনও প্রামাণ্য নথিই সংরক্ষিত নেই।