অপরাধীদের ফাঁসিতেই সায় দিল সুপ্রিম কোর্ট


নয়াদিল্লি: অপেক্ষা শেষ। আর কোনও আবেদনের জায়গা রাখল না সুপ্রিম কোর্ট। নির্ভয়া-কাণ্ডের অপরাধীদের ফাঁসির সাজাই বহাল রাখল শীর্ষ আদালত।

সোমবার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি আর বানুমাথি ও অশোকভূষণের বেঞ্চ এদিন ওই ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মুকেশ (29), পবন গুপ্ত (22), বিনয় শর্মা (23)'র শাস্তির ব্যাপারে রায় দিল। তবে, ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত চতুর্থজন অক্ষয় কুমার সিংহ নিজের ফাঁসির সাজা কমানোর জন্য আর কোনও আবেদন করেনি।

গত বছরের মে মাসে দিল্লি হাইকোর্টের দেওয়া শাস্তি বহাল রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরপর শাস্তি কমানোর জন্য তারপর আবেদন করে দোষীরা। গত বছরের নভেম্বরে তাদের আবেদন মঞ্জুর করে শীর্ষ আদালত। দু'পক্ষের বক্তব্য শুনে রায়দান স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।

অভিযুক্তদের একজন, ওই বাসের চালক রাম সিংহ, জেলের মধ্যেই আত্মহত্যা করে। অন্য আরেকজন অভিযুক্ত, যার বয়স ওই ঘটনার সময় ১৮'র কম ছিল, তাকে জুভেনাইল হোমে রাখা হয়েছিল। তিন বছর সেখানে থাকার পর ছেড়েও দেওয়া হয় তাকে। এই ঘটনাটিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে 'নৃশংস, পাশবিক ও নারকীয়' বলে অভিহিত করা হয়।

২০১২, ১৬ ডিসেম্বর রাত:

রাত ৯টা। প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী ও তার এক বন্ধু সিনেমা দেখে ফিরছিলেন। দিল্লির মুনিরকায় অপেক্ষা করছিলেন অটোর জন্য। দ্বারকা ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কোনও গাড়ি না পেয়ে একটা অফ ডিউটি চার্টার্ড বাসে উঠে পড়েন দু'জনে।

বাসে উঠেন দেখেন, ড্রাইভারের কেবিনে বসে আছে চারটি ছেলে আর দু'জন কেবিনের পিছনে। বাকি গোটা বাসটা খালি। বাসের বাঁদিকে বসেছিলেন তাঁরা। ২০ টাকা ভাড়াও দেন। এয়ারপোর্টের কাছে ফ্লাইওভারের নিচে পৌঁছয় বাস। হঠাৎ ড্রাইভারের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসছে চারটি ছেলে।

নির্ভয়ার বন্ধু বুঝতে পারেন বাসটি ভুল পথে যাচ্ছে। আর দরজাগুলো বন্ধ। চেঁচিয়ে ওঠেন তিনি। শুরু হয় বচসা। এত রাতে একটা মেয়েকে নিয়ে কেন যাচ্ছে? প্রশ্ন করা হয় ওই যুবককে। মারধর করা হয় তাকে। বন্ধুকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন যুবতী। তখন বাসের ভিতর অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তাঁর বন্ধু। তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া হল পিছনের সিটে। মদ্যপ ছেলেগুলো ধর্ষণ করে তাঁকে। আটকাতে গেলে একটি ছেলে তাঁর শরীরের গোপন অঙ্গে রড ঢুকিয়ে দেয়। মেয়েটি তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। অর্ধ-নগ্ন, অচেতন যুবতী ও তাঁর বন্ধুকে বাস থেকে ঠেলে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

রাত ১১টায় তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সফদরজং হাসপাতালে সাতদিন ধরে চলে জীবন-মরণ লড়াই। জীবনের লড়াইতে হেরে যান নির্ভয়া। আদালত কক্ষে সুবিচার যেন তাঁকে জিতিয়ে দেয়, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছে সবাই।