ক্যানসার কোষমুক্ত যমজ সন্তানের জন্ম, নজির গড়লেন মুম্বইয়ের চিকিৎসকরা


মা, দুই মাসি ও মামা ক্যানসারে আক্রান্ত। স্বাভাবিক নিয়মে গর্ভস্থ ভ্রুণের শরীরেও  মারণরোগের জিন থাকার আশঙ্কা ছিল৷ ডাক্তারি পরীক্ষায় তেমনটাই জানা গিয়েছিল৷ কিন্তু সন্তান শরীরে ক্যানসারের জিন নিয়ে জন্মাক, তা চাননি বেঙ্গালুরুর স্বয়ম প্রভা৷ তাঁর ইচ্ছাপূরণ করলেন মুম্বইয়ের যশলোক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তবে যমজ দুই শিশুর ভবিষ্যতে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই, তা কিন্তু নয়৷ তবে মামারবাড়ির দিক থেকে জন্মসূত্রে যাতে তাদের শরীরের ক্যানসারের জিন না থাকে, তা নিশ্চিত করতে পেরেছেন চিকিৎসকরা৷

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন দুই মাসি৷ মারণরোগের সঙ্গে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মা ও মামা৷ এমনকী, বছর আটেক আগে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা স্বয়ম প্রভা জানতে পারেন, শরীরে ক্যানসারের জিন বহন করছেন তিনি নিজেও৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণত মায়ের শরীর থেকেই ক্যানসারের জিন পরিবাহিত হয় সন্তানের শরীরে৷ পরবর্তীকালে যে বা যারা পৃথিবীতে আসবে, তাদের শারীরিক সুস্থতা চিন্তিত হয়ে পড়েন স্বয়ম প্রভা৷ চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারেন, ভ্রূণের জেনেটিক অ্যানালিসিস করে ক্যানসার প্রবণতা সম্পর্কে আগাম জানা সম্ভব৷ স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেন স্বয়ম৷ ঠিক করেন, স্বাভাবিক নিয়মে নয়, ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে সন্তান গর্ভে ধারণ করবেন তিনি৷ ভরতি হন মুম্বইয়ের যশলোক হাসপাতালে৷ ক্যানসার জিনমুক্ত যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন স্বয়ম প্রভা৷

কিন্তু, ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন ব্যাপারটা কী?  আইভিএফ বিশেষজ্ঞ ফারুজা পারিখ জানান,  প্রথমে হরমোন প্রয়োগ করে মহিলার শরীরে একাধিক ডিম্বাণু (এগসেল)তৈরি করা হয়। পরিণত ডিম্বাণুগুলি বাইরে বের করে সেগুলিকে দেহের বাইরেই নিষিক্ত করা হয়। আটটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হলেও তারমধ্যে দু'টি শুরুতেই নষ্ট হয়ে যায়। বাকি ছ'টি ডিম্বাণু ব্লাস্টোসিস্ট দশায় পরিণত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন চিকিৎসকরা। তারপর ভ্রূণের বায়োপ্সি করে জিন অ্যানালিসিস পদ্ধতিতে জানতে পারেন দু'টি ভ্রূণে বিআর সিএ-১ জিনটি নেই। ক্যানসার জিন মুক্ত এই দু'টি ভ্রূণই স্বয়ম প্রভার গর্ভে স্থানান্তরিত করা হয়। ন'মাস গর্ভধারণের পর অবশেষে ক্যানসার জিন মুক্ত দুই সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন স্বয়ম প্রভা। এই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এদেশে প্রথম সাফল্য মিলল বলে দাবি করেন ডা৷ফারুজা পারিখ। তবে স্বয়ম প্রভার যমজ সন্তানের ভবিষ্যতে ক্যানসার যে একেবারেই হবে না, তা কিন্তু, নয়৷ কিন্তু, মায়ের শরীর থেকে কোনও জিন সদ্যোজাতের শরীরে ঢোকেনি৷

Highlights

মা, দুই মাসি ও মামা ক্যানসারে আক্রান্ত।

ক্যানসারের জিন বহন করছেন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা স্বয়ম প্রভা।

ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের ক্যানসার জিনমুক্ত যমজ সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি।