মেলা ফেরত মূক যুবতীকে ‘গণধর্ষণ’


উল্টোরথের মেলা থেকে ফেরার পথে মূক-বধির এক যুবতীকে বাঁশঝাড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়রে। উদ্ধারের পরে সেই যুবতী অভিযুক্তের নাম কাগজে লিখে দেন। পরে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ স্থানীয় মৌকুচি গ্রামের শ্যামসুন্দর খাঁড়া নামে সেই অভিযুক্ত যুবককে মঙ্গলবার সকালে গ্রেফতার করে। বাকি তিন অভিযুক্তের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস।

পেশায় দিনমজুর যুবতীর বাবা জানান, পড়শি এক মহিলার সঙ্গে তাঁর বছর কুড়ির মেয়ে রবিবার গ্রামে উল্টোরথের মেলা দেখতে গিয়েছিলেন। রাত ১০টার সময় তাঁরা ফিরছিলেন। ভিড়ের মধ্যে তরুণীকে দেখতে না পেয়ে পড়শি ওই মহিলা একা বাড়ি ফেরেন। এক ঘণ্টা পরে যুবতীর বাবা খবর পান, গ্রামের এক প্রান্তে বাঁশঝাড়ে তাঁর মেয়ে পড়ে রয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যায় যুবতীর বাবা পাত্রসায়র থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, মেয়েকে অচৈতন্য অবস্থায় বাড়ি নিয়ে আসেন। জ্ঞান ফেরার পরে তাঁর মেয়ে আকারে-ইঙ্গিতে বোঝান, মেলা থেকে ফেরার পথে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে। যুবতীর বাবার অভিযোগ, ''মেয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল। ইঙ্গিতে সে জানায়, মুখ, হাত-পা বেঁধে তার উপরে অত্যাচার করা হয়েছে। কে তাঁর সর্বনাশ করল জানতে চাওয়ায়, মেয়ে কাগজে শ্যামসুন্দর খাঁড়ার নাম লেখে। শ্যামসুন্দরকে সেই রাতেই মেয়ের সামনে ডেকে আনি। শ্যামসুন্দরকে চাপ দিতে সে বাকিদের নাম বলেছিল। তাদেরও নিয়ে আসি। মেয়ে ওদের চিনিয়ে দিতেই তারা পালায়। আমরা ওদের চরম শাস্তি দাবি করছি।''   

মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে এসডিপিও ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, ''ওই বাঁশঝাড় থেকে মদের বোতল-সহ কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি তিন জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।'' তিনি জানান, অভিযোগকারী পরিবারটি তাঁর কাছে মৌখিক ভাবে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন। সে জন্য তাঁদের নিরাপত্তা দিতে পাত্রসায়র থানার ওসিকে বলা হয়েছে।

যদিও দুপুর সওয়া ১২টায় ওই বাড়িতে গিয়ে কোনও পুলিশকর্মীকে আশপাশে দেখতে পাওয়া যায়নি। অ্যাসবেসটসের ছাউনির বাড়িতে তিন মেয়েকে নিয়ে ওই পরিবারের বাস। ঘটনার পর থেকে তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। নির্যাতিতা অবশ্য বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ জানিয়েছে, যুবতীকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে পাঠানো হয়েছে। ধৃতেরও মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে এসডিপিও জানিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও মারধরের ধারা দিয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। এ দিন বিষ্ণুপুর আদালতে ধৃতকে তোলা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী অভিজিৎ দে জানান, পুলিশ ধৃতকে পাঁচ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল। বিচারক ধৃতের তিন দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। যুবতীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। সে জন্য মূক-বধির তরুণীর ইঙ্গিত বুঝতে সক্ষম ব্যক্তির মাধ্যমে জবানবন্দি নেওয়া হবে।

এ দিকে, মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে এলাকার কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের দাবি, সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর সময় পাত্রসায়র থানার ভিতরে ঢুকে কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মী অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেন। এমনকী অভিযোগ তুলে না নেওয়া হলে, খুন করা হবে বলেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

এলাকার তৃণমূল নেতা তথা পাত্রসায়র ব্লক কোর কমিটির সদস্য নব পালের দাবি, ''আমিই তাঁদের থানায় অভিযোগ করতে যেতে বলি। আমরাও চাই দোষীদের চরম শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু, আমাদের দলের কেউ কখনই থানায় অভিযোগ জানাতে বাধা দেয়নি। ও সব মিথ্যা অভিযোগ।''