‘হলের চেয়ে নেটফ্লিক্সে লোকে বাংলা ছবি বেশি দেখে’, বলছেন ইন্দ্রাশিস


'পিউপা' নিয়ে আশাবাদী ইন্দ্রাশিস। 

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাঁর অনুজ পরিচালক ইন্দ্রাশিস লাহিড়ীকে লিখে পাঠিয়েছিলেন, 'বিলু রাক্ষস' দেখে আমি সত্যি অভিভূত। আমার দেখা এ কালের ভাল বাংলা ছবির মধ্যে রইল এই ছবি। এর মধ্যে এক রকম স্বচ্ছ, সৎ শিল্প আছে। সিনেমা সঠিক ভাবে বোধগম্য না হলে এ ছবি তৈরি করা অসম্ভব। আমি এই পরিচালকের পরবর্তী ছবি দেখার অপেক্ষায়।'

ইন্দ্রাশিষের পরবর্তী ছবি অবশেষে ২৭ জুলাই প্রেক্ষাগৃহে। সেন্সর বোর্ড, হল পাওয়া, অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে 'পিউপা'-কে। ''আসলে আমার পেছনে ব্যাকআপ নেই। বড় ব্যানার নেই। মিডিয়া উন্মুখ নয়...'' একটু যেন হতাশার সুর তাঁর গলায়। কিন্তু পরক্ষণেই স্বর বদলে জানালেন, সুরিন্দর ফিল্মস্ এই ছবির জন্য হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি যারপরনাই খুশি।

তাঁর ছবি মানেই অন্য ফর্মে গল্প বলা। কাস্টিংয়ের ধরন আলাদা। রিয়্যালিস্টিক শুট। লং শট। এডিটিং-এর ঝক্কি কম। নিজের ছবির গল্প তিনি নিজেই লেখেন।

''আসলে এই ভাবেই গল্প বলতে চাইছি। মানে দর্শক কোন জায়গাটা ভালবাসবে। কোথায় কাঁদবে। গান কেমন চাইবে? আমি ভাবি না। আমি জানি আমার ছবি ব্লক বাস্টার হবে না। তাতে কী? সিনেমা কি শুধু বিনোদন হয়েই থেকে যাবে?'' নিজের কাছেই যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন ইন্দ্রাশিস।

তিনি বাস্তববাদী। জানেন, এই ফর্ম দারুণ সফল না-ও হতে পারে। কিন্তু এই ধারার ফর্ম বাংলা ছবিতে থাকুক। যাতে অন্য কেউ তা দেখে অনুপ্রাণিত হন...এটুকুই আশা ইন্দ্রাশিসের। আপনা থেকেই বললেন, ''পিউপা বিরাট বাজেটের ছবি নয়। প্রযোজক যাতে পিউপা থেকে লাভ করতে পারেন সেই ভাবনা আমার মাথায় ছিল। আর আমার মনে হয়, পিউপা থেকে প্রযোজক লাভ করবেন।''

প্রযোজকের মাটি শক্ত করলেও বাঙালি দর্শক কতখানি হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখে? এ নিয়ে সন্দিহান ইন্দ্রাশিস। জানালেন, বিলু রাক্ষসের মতো ছবি লোকে হলের চেয়ে নেটফ্লিক্সে দেখেছে অনেক বেশি। 'ফেসবুকে প্রচুর মানুষ লেখেন আপনার পরের ছবি কবে দেখব। আমার এটাই পাওয়া।' কিন্তু তাঁকে সচরাচর পার্টি বা প্রিমিয়ারে পাওয়া যায় না। অন্য দিকে কর্পোরেট অফিসের চাকরি সামলাতে হয় তাঁকে দিনের অনেকটা সময়। চাকরি ছাড়তে পারেন না? সিনেমা করলে তো ছাড়তেই হয়...

''আসলে সিনেমা আর চাকরি আমায় কমপ্লিমেন্ট করে। চাকরির একঘেয়েমি ছবিতে, আর ছবির একঘেয়েমি চাকরির মধ্যে দিয়ে হাল্কা করি আমি,'' সপ্রতিভ ইন্দ্রাশিস। তবে ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকদের মধ্যে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অতনু ঘোষের সাহায্য, পরামর্শ তিনি কোনও দিনই ভোলেননি। কনীনিকা, রাহুল ছাড়াও জয় সরকার তাঁর বিশেষ বন্ধু। ''ও রকম সংযত মিউজিশিয়ান খুব কম দেখা যায়'', যোগ করলেন ইন্দ্রাশিস। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ও তাঁর সঙ্গে আছেন।

কিন্তু 'পিউপা'-র বিষয় কী?
''মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে কলকাতায় ফিরে আসে ছেলে শুভ্র। সমস্ত কাজকর্ম শেষে ফিরে যাওয়ার পথে বাবার অসুস্থতা আটকে দেয় শুভ্রকে। হঠাৎ কোমায় চলে যায় তার বাবা। এ দিকে বাবাকে ফেলে কলকাতা ছাড়তে চায় না শুভ্র। তখনই মারা যায় বাবা। কিন্তু সেই মৃত্যুকে ঘিরে দানা বাঁধে রহস্য।''

বড় পর্দায় উচ্চ মধ্যবিত্তের ক্যানভাস তুলে ধরতে চেয়েছেন পরিচালক। অওরঙ্গাবাদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবির সুবাদে সেরা পরিচালকের সম্মানও পেয়েছেন ইন্দ্রাশিস।

তাঁর ক্যানভাসে যদিও আরও বৃহত্তর প্রেক্ষিত নিয়ে সব দর্শককে ছুঁয়ে যাওয়া আর এক নতুন ছবি দানা বাঁধছে!

আমরা আপাতত শুয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হয়ে ওঠা ইন্দ্রাশিসের 'পিউপা'-র অপেক্ষায়।