মহিলাকে পায়রার রক্ত খাইয়ে তান্ত্রিকের ঝাড়ফুঁক, মধ্যমগ্রামে শোরগোল


বারাসত: আষাঢ়ের রাতে হঠাৎ মাইকে চণ্ডীপাঠ শুনে চমকে ওঠেন এলাকার বাসিন্দারা। ছুটে গিয়ে তাঁরা যা দেখলেন তা কোনও ভৌতিক হিন্দি সিনেমার দৃশ্যকেও হার মানায়। ঘরের ভিতর মুণ্ডমালা গলায় পরে যজ্ঞ করছে এক তান্ত্রিক। তার সামনে বসে গর্জন করছেন এক মহিলা। তাঁর আচার আচরণ আর রক্তচক্ষু দেখে এলাকাবাসীর আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, ওই মহিলাকে ভূতে ভর করেছে। আর সেই ভূত তাড়াতে ঝাড়ফুঁক করার পর ওই মহিলাকে পায়রার রক্ত খাওয়াল ওই তান্ত্রিক।

২০১৮ সালে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য শুনে মনে হবে কোনও অজ পাড়া গাঁয়ের ঘটনা। তবে কোনও গ্রামে নয়। মঙ্গলবার রাতে ওঝা আর ভূতের এই খেলা তারিয়ে তারিয়ে দেখল শহরবাসী। যার সাক্ষী রইল বড় বড় ইমারত, কফি শপ আর শপিং মল ঘেরা মধ্যমগ্রাম শহর। রাতভর ওই মহিলার উপর ঝাড়ফুঁক চলল। তাঁকে মাটিতে ফেলে ঝাঁটার মার থেকে শুরু করে রক্ত পান করানো সবই হল। আইনের চোখে যা দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ লেখাপড়া জানা মধ্যমগ্রামের মানুষ সে সব দেখে উপভোগ করলেন। কিন্তু পুলিশকে খবর দিলেন না কেউ। মঙ্গলবার রাতে পায়রার রক্ত খাওয়ানোর পরই সংজ্ঞা হারান ওই গৃহবধূ। বুধবার বিকেল পর্যন্ত সেভাবেই সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। ওঝার দাবি, "সদ্য ভূত ছেড়ে গিয়েছে, তাই জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে।" সেই আশ্বাসেই সম্তুষ্ট ওই গৃহবধূর পরিবার ও এলাকাবাসী।

মধ্যমগ্রামের সাহেববাগান এলাকার বাসিন্দাদের থেকে জানা যায়, ওই গৃহবধূর নাম দীপা বারুই। বছর সাতেক আগে গুমায় বিয়ে হয়েছিল তাঁর। একটি সন্তানও আছে দীপাদেবীর। স্থানীয়দের দাবি, বছর তিনেক আগে দীপার শাশুড়ির মৃত্যু হয়। দু'বছর আগে থেকে সেই শাশুড়ির আত্মাই নাকি তাঁর উপর ভর করেছে। দু'বছর ধরেই মাঝে মধ্যে অসংলগ্ন আচরণ করেন দীপা। মাস খানেক থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। সম্প্রতি তাঁর অসংলগ্ন আচরণ বেডে়ই চলেছে। তাই কিছুদিন আগে দীপার বাপের বাড়ির লোকেরা তাঁকে মধ্যমগ্রামে নিয়ে আসেন। তাঁরাই ওঝার ব্যবস্থা করেন।

মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে মাইক বেঁধে ভূত তাড়ানোর কাজ শুরু করে ওই ওঝা। ঘরের ভিতর যজ্ঞর আয়োজন করা হয়। মাইকে চণ্ডীপাঠ চালানো হয়। একা দীপা নয়, ওই এলাকার এক কিশোরের উপর নাকি ভূতে ভর করেছে। স্থানীয়দের দাবি, ওই কিশোরের পূর্বজন্মের প্রেমিকা তার 'ঘাড়ে চেপেছে। তাই এক ঢিলে দু'পাখি মারার ব্যবস্থা করে ওই ওঝা। দীপার বাপের বাড়িতে যে যজ্ঞর আয়োজন করা হয়, সেখানেই ওই কিশোরকে আনা হয়।

স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, যজ্ঞ চলাকালীন হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দীপা। ওঝাকে মাটিতে ফেলে তার ঘাড়ে পা তুলে দেন তিনি। তবে ওঝা তাতেও দমেনি। সেই অবস্থাতেই ঝাড়ফুঁকের কাজ চালিয়ে যায়। অবশেষে দীপা এবং ওই কিশোরকে পায়রার রক্ত খাওয়ানো হয়। এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সহ-সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তীর দাবি, "ঝাড়ফুঁক করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ওঝারা অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এ ধরনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত ওঝারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পাবে, ততদিন এই ব্যাধি কমবে না। মধ্যমগ্রামে মানুষের সামনে অপরাধ করার পর সেই ওঝার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হল না।"