‘ওকে ছেড়ো না!’ মৃত্যুর আগে ভাইকে টেক্সট দিল্লির বিমানসেবিকার


মৃত্যুর ঠিক আগে অনেককেই টেক্সট মেসেজ করেন অ্যানিসিয়া। ছবি: অ্যানিসিয়া বাত্রার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সৌজন্যে।

স্ত্রী-র টেক্সট মেসেজটা পেয়েই ছাদে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাঁকে খুঁজে পাননি। এর কিছু ক্ষণ পরেই স্ত্রী অ্যানিসিয়ার নিথর দেহ মিলল। অভিযোগ, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েই আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবে একে আত্মহত্যা বলতে নারাজ মৃতার পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, পণের দাবি না মেটানোয় অ্যানিসিয়াকে খুন করতে পারেন তাঁর স্বামী ময়ঙ্ক সিঙ্ঘভি। ঘটনার তিন দিন পর ফের মৃতার দেহের ময়নাতদন্ত করেছে পুলিশ।

দিল্লির ডিসিপি (সাউথ) রোমিল বানিয়া জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ওই ঘটনা ঘটে। মৃতের নাম অ্যানিসিয়া বাত্রা (৩২)। জার্মান বিমান সংস্থা লুফৎহান্‌সা এয়ারলাইন্স-এর বিমানসেবিকা অ্যানিসিয়া দক্ষিণ দিল্লির হজ খাস এলাকায় বছর সাতেক ধরেই ময়ঙ্কের সঙ্গে একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। বছর দুয়েক আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে ওই ঘটনার সময় ময়ঙ্ক বাড়িতেই ছিলেন বলে জানিয়েছেন। মৃত্যুর ঠিক আগে ময়ঙ্ককে একটি টেক্সট মেসেজ করেন অ্যানিসিয়া। তাতে তিনি লিখেছিলেন, এ বার যে কোনও রকমের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন তিনি। সেই টেক্সট করার পরই ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। ছাদ থেকে অ্যানিসিয়ার দেহ নীচে পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যান ময়ঙ্ক। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

পুলিশের এই বক্তব্যে অবশ্য সহমত নন অ্যানিসিয়ার পরিবারের লোকজন। মৃতার ভাই কর্ণ বাত্রা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, পণের দাবিতে তাঁর দিদিকে প্রায়শই শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন ময়ঙ্ক। এ নিয়ে গত জুনেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অ্যানিসিয়ার বাবা মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আর এস বাত্রা। তাতে তিনি ময়ঙ্ক-সহ তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মেয়ের উপর অত্যাচারের দাবি করেছিলেন।
কর্ণ জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন অ্যানিসিয়া। কর্ণ বলেন, "আমার বোন টেক্সট মেসেজ করে পুলিশ ডাকতে বলেছিল। ও বলেছিল, ময়ঙ্ক ওকে ঘরে বন্ধ করে রেখেছে। ...ময়ঙ্কের জন্যই তাঁর জীবন শেষ হয়ে যাবে।" অ্যানিসিয়া লিখেছিলেন, "ওকে ছেড়ো না!" কর্ণের সন্দেহ, "আমরা সত্যিই জানি না, অ্যানিসিয়া নিজেই ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল, না ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল!"

কর্ণের দাবি, টাকার দাবি করা ছাড়া মদ্যপ অবস্থায় বোনকে মারধর করতেন ময়ঙ্ক। এমনকী তাঁর শাশুড়ির উপরেও এক বার হাত তুলেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: হাজারিবাগে বুরারি! মৃত ৬
কর্ণ আরও জানিয়েছেন, রবিবার দ্বিতীয় বারের ময়নাতদন্তের গোটাটাই ভিডিয়োগ্রাফ করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। তবে ভিডিয়োগ্রাফ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কর্ণের আরও অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের সঙ্গে কোনও সহযোগিতাই করছে না।

তদন্তে নেমে সেই সব অভিযোগও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এটি পণের দাবিতে খুন কি না, তা-ও দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। এ বিষয়ে একটি মামলাও রুজু করা হয়েছে। ময়ঙ্কের পরিবারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।