নাগরিকপঞ্জিতে নাম নেই ৪০ লাখের, অসম জুড়ে হাই অ্যালার্ট


অসমের খসড়া ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) বা নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ গেল ৪০ লাখ মানুষের নাম। সোমবারই এই রেজিস্টার প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত তালিকা থেকে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন কোটি ৩০ লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় দু'কোটি ৯০ লক্ষ নাম। এই তালিকা প্রকাশের কিছুক্ষণ পরই এ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। বাঙালি তাড়াও অভিযান চলছে। ভোট রাজনীতি করতে গিয়ে বিভাজনে উস্কানি দিচ্ছে কেন্দ্র। এই ৪০ লাখ লোকের ভবিষ্যৎ কী হবে? এই বিপুল সংখ্যক মানুষের পুনর্বাসন প্যাকেজ নিয়ে কিছু ভেবেছে কেন্দ্র? নিজের দেশের মধ্যেই উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে এই মানুষগুলো। যদি পুশব্যাক হয়, অর্থাৎ বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, এবং বাংলাদেশ যদি তাঁদের না নেয়, তাহলে তাঁরা কোথায় যাবে?

কিন্তু এনআরসি কো-অর্ডিনেটরের এই বক্তব্যের পরও অশান্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেই আশঙ্কা থেকেই অসম জুড়ে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। অসম ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে ২২০০০ আধাসেনা পাঠানো হয়েছে। রাজ্য পুলিশকে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ছুটি বাতিল করা হয়েছে সমস্ত সরকারি কর্মীদের।

প্রকাশিত খসড়া তালিকা থেকে জানা গিয়েছে, মোট তিন কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪ জন এনআরসি-তে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু'কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭ জনের নাম তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। নাম বাদ পড়ল ৪০ লক্ষ সাত হাজার ৭০৭ জনের। অবশ্য কাদের নাম বাদ পড়ল, তা জানানো হবে না। ব্যক্তিগত ভাবে অনলাইনে, এসএমএসের মাধ্যমে, হেল্পলাইনে ফোন করে বা সেবাকেন্দ্র থেকে তা জানতে হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করে এনআরসি রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া শৈলেশ বলেন, আজ শুধু অসম নয়, দেশের পক্ষে ঐতিহাসিক দিন। এত বিরাট, জটিল প্রক্রিয়া আজ পর্যন্ত দেশ তো বটেই বিশ্বেও হয়নি। ১৯৫৫ ও ২০০৩ নাগরিকত্ব আইন ও নির্দেশিকা মেনে স্বচ্ছভাবে প্রক্রিয়া চলেছে। সাড়ে ৬ কোটি নথিপত্রের অনেক তদন্ত, যাচাই ক্রমাগত হয়ে চলেছে। ২০১৩ সাল থেকে শুরু। কেন্দ্র ও রাজ্যের কড়া পরিশ্রম, হাজেলা এবং তাঁর দল মিলিয়ে ৫০ হাজার কর্মী এই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। এটা খসড়া মাত্র। সকলে নিজের নাম ঢোকানো বা সংশোধনের পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। যাঁরা পারবেন না, তাঁদের সাহায্য করবে দফতর। সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার পাবেন প্রত্যেক ভারতীয়।

সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব সত্যেন্দ্র গর্গ। তিনি বলেন, ''মনে রাখতে হবে এটা খসড়া। ১৩ অগস্ট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এই খসড়ার ভিত্তিতে সীমান্ত শাখা, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কেউ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না। ডিটেনশন শিবিরে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্র সব ধরনের সাহায্য করবে। কেউ উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করলে কড়া হাতে দমন করা হবে।''

পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। তার দু'দিন আগে অর্থাৎ ২৪ মার্চ পর্যন্ত যাঁরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে অসমে এসেছেন, তাঁদের ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু তার পরেও বহু মানুষ বাংলাদেশ থেকে অসমে চলে এসেছেন। সেই সংখ্যা আলাদা করতেই এই নাগরিক পঞ্জি তৈরি শুরু হয়।

নাগরিক পঞ্জির খসড়া প্রকাশের আগেই সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তালিকায় নাম না থাকলেও তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু উদ্বেগ কাটছে না অনেকেরই। বিশেষ করে খসড়ায় বরাক এবং ব্রহ্মপু্ত্র উপত্যকায় বাঙালিদের নাম কম ওঠায় বাংলাভাষীদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সংখ্যালঘুদের মনেও নাম বাদ পড়ার তীব্র আশঙ্কা। গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশে ডি-ভোটার ও তাঁদের বংশধরদের নামও তালিকার বাইরে রাখা হচ্ছে।