শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন বিধি


দেশজুড়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে এবং তাঁদের আইনের নিগড়ে বাঁধতে এ বার পেশাগত আচরণ বিধি আনছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। উপাচার্যকে দিয়ে সহ-উপাচার্য নিয়োগ, কলেজ অধ্যক্ষের কাজের মেয়াদ বেঁধে দেওয়া এবং তা শেষ হলে পুরোনো ক্ষেত্রে ফিরে যাওয়া, এমন নানা নিয়মের কথা বলা হয়েছে সেখানে। যা স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্ক খুঁচিয়ে তুলেছে। 

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগের খোলনলচে বদলাতে গত ১৮ জুলাই তারা যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাতে কর্মক্ষেত্রে শিক্ষকদের দায়িত্ব বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে এতদিন নিয়োগপত্রের উপরে ভরসা করলেই চলত। ইউজিসি-র নয়া বিধিতে এই প্রথম সার্ভিস এগ্রিমেন্টের কথা বলা হয়েছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্ট্যাম্প পেপারে এই চুক্তি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার, কলেজের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষের কাছে রাখা থাকবে সেই চুক্তিপত্র। নতুন এই সব নিয়ম ঘিরে শিক্ষক মহলে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। শিক্ষক সংগঠনগুলির প্রশ্ন --- সরকারি চাকরিতে 'গ্রুপ ডি' নিয়োগের ক্ষেত্রেও সার্ভিস এগ্রিমেন্ট নেই। কেন্দ্র কি এ বার উচ্চশিক্ষায় চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে গুরুত্ব দিতে চাইছে? 
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কী করবেন, কী করতে পারবেন না, সে সব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পড়ুয়া, সহকর্মী, শিক্ষাকর্মী, অভিভাবক এবং সমাজের প্রতি শিক্ষক কেমন আচরণ করতে বাধ্য, সেটাও এই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, উচ্চশিক্ষায় নিযুক্ত শিক্ষকদের এ বার বার্ষিক আত্মসমীক্ষা রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এমনকি উপাচার্য, সহ-উপাচার্য এবং কলেজ অধ্যক্ষদের আচরণবিধিও চূড়ান্ত করে দেওয়া হয়েছে। মাসকয়েক আগে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য আদর্শ আচরণ বিধির খসড়া তৈরি করেছিল। তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। যদিও বিতর্কের জেরে তার দায় ঝেড়ে ফেলে বিকাশ ভবন। কিন্তু যে কমিটি ওই খসড়া বানিয়েছিল, সেটি আছে। 

ইউজিসি-র নিয়মে অবশ্য একটি ইতিবাচক দিক আছে। তা হল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত শিক্ষকদের প্রবেশনারি পিরিয়ড মাত্র এক বছরের। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিজ অ্যান্ড কলেজেস (অ্যাডমিনিস্ট্রেশনস অ্যান্ড রেগুলেশন) আইন অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষকদের প্রবেশনারি পিরিয়ড তিন বছরের। 

কিন্তু বিতর্কের অবকাশ কম নয়। ইউজিসি-র নয়া বিধিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতি আমূল বদলাচ্ছে। আর রাজ্য বা উচ্চশিক্ষা দপ্তর নয়। খোদ উপাচার্য সহ-উপাচার্যকে নিয়োগ করবেন। সহ উপাচার্যের কার্যকালের মেয়াদও থাকবে না। উপাচার্য চলে গেলে তিনিও চলে যাবেন। পাশাপাশি এ বার কলেজ অধ্যক্ষদের কাজের মেয়াদও ৫ বছরের জন্য বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। তবে একজন অধ্যক্ষকে দ্বিতীয় দফায় পুনর্বহাল করা যেতে পারে। কিন্তু ১০ বছরের মেয়াদ শেষ হলে তাঁর পুরোনো কর্মক্ষেত্রে প্রফেসর হিসেবে যোগ দিতে হবে। কোনও কলেজে অধ্যক্ষ না থাকলে প্রবীণতম শিক্ষককে উপাধ্যক্ষর দায়িত্ব দিতে হবে। 

অবসরের পরে শিক্ষকদের ৭০ বছর পর্যন্ত পুনর্নিয়োগ বৈধ বলেও নতুন এই বিধিতে জানানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেই অবসরের পরে পুনর্নিয়োগ চালু ছিল। ২০১৬-র শেষ পর্বে উচ্চশিক্ষা দপ্তর সেই প্রথা প্রত্যাহার করে নেয়। ২০১৭-র জানুয়ারিতে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক সভায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়িয়ে ৬২ করা হল। যদিও বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় পুনর্নিয়োগের চল নেই। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগে নেট ও সেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হতে গেলে পিএইচডি বাধ্যতামূলক। তবে যে কোনও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি মান্যতা পাবে না। টাইমস, কিউএস এবং এআরডব্লিউ সাংহাই র৵াঙ্কিংয়ে প্রথম ৫০০-র মধ্যে থাকলে তবেই তা গ্রাহ্য হবে। কলেজ অধ্যক্ষ হতে হলে ন্যূনতম ১০টি পাবলিকেশন চাই। এতদিন ইউজিসি তালিকাভুক্ত জার্নালের পাশাপাশি পিয়ার জার্নালও যুক্ত হল।