ঘণ্টা প্রতি ১৩০ টাকা জল কিনে চাষের ক্ষমতা নেই


বর্ধমান : ভরা শ্রাবণেও বৃষ্টি নেই। জেলার বিভিন্ন গ্রামে চাষিদের বীজতলা শুকিয়ে চৌচির। অনেকেকেই দু'বার করে বীজতলা তৈরি করতে হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত আবহাওয়া দপ্তরের হিসেবে জেলায় বৃষ্টিঘাটতি ২৫ শতাংশ। ফলে চিন্তার ভাঁজ চাষিদের কপালে।

সাব মার্সিবলের জল কিনে চাষ ব্যয়সাপেক্ষ। ১৩০ টাকা ঘণ্টা প্রতি জল কিনে বীজতলা বাঁচানোর সামর্থ্য বহু চাষিরই নেই। সে ক্ষেত্রে খরচ বাঁচাতে রাস্তার ধারের নয়ানজুলি থেকে বালতিতে জল এনে বীজতলা বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে চাষিদের। সব মিলিয়ে আমন চাষের শুরুতেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন চাষিরা।

কিছুটা অবস্থাপন্ন চাষিরা সাব মার্সিবলের জল কিনে চাষ করতে পারলেও সব থেকে বিপদে পড়ছেন প্রান্তিক চাষিরা। ভাতারের বনপাশ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রুপিপুকুর, কামারপাড়া, বর্ধমান-১ ব্লকের খেতিয়া, সোনাপলাশি, করিয়া, সাহাপুর, গলসি-২, খণ্ডঘোষ, মেমারি ---সর্বত্রই এক ছবি। বীজতলার ধানবীজ শুকিয়ে মরছে জলের অভাবে। অগত্যা ভরসা সাব মার্সিবলের জল। তবে এরই মধ্যে চাষিদের জন্য একটু হলে ভালো খবর দিয়েছে প্রশাসন। ২৩ তারিখ থেকে চাষের জন্য সেচ ক্যানালের মাধ্যমে জল ছাড়বে ডিভিসি। এই সমস্ত এলাকায় সেই জল আসতে ২৪ বা ২৫ তারিখ হয়ে যাবে বলে মনে করছে কৃষি দপ্তর। 

বীজতলা তৈরির তিন সপ্তাহের মধ্যে জমিতে রোয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। এ বার সেই ধান রোয়ার কাজ এখনও শুরু হয়নি। জিরোটিল পদ্ধতিতে যারা চাষ করছে তেমন কয়েক'টি এলাকা ছাড়া বেশিরভাগ মাঠই ফাঁকা। জমি তৈরি হলেও এখনও জলের অভাবে জমিতে নিরেন দিতে পারেননি চাষিরা। বেলেরা গ্রামের চাষি নারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, 'আমার ২৫ বিঘে জমিতে চাষ। এখনও এক ছটাক জমিতেও ধান রোয়া হয়নি। বীজতলা ফেটে চৌচির। ১৩০ টাকা ঘণ্টা জল কিনে বীজতলা বাঁচাতে হবে, নইলে বীজ শুকিয়ে মরবে। ক্যানালে সেচের জলও নেই।' বৈকুন্ঠপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা কাজি মহম্মদ সফিক বলেন, '৩০ বিঘাতে আমি চাষ করি। জল নেই আকাশে। দু'বার বীজতলা তৈরি করেছি। এখন ফাটল ধরেছে। এক-দু'দিনের মধ্যে জল না হলে বীজ মরতে শুরু করবে।' কয়রাপুরের বাসিন্দা শম্ভু হাজরার বক্তব্যও এক। বলেন, 'আমার মাত্র আট বিঘা জমি। কিছুটা ভাগে চাষ করি। এমনিতেই চাষের খরচ বেড়েছে। সাব মার্সিবলে জল কিনে বীজতলা বাঁচানোর ক্ষমতা নেই। কোনও রকমে বালতি করে নয়ানজুলি থেকে জল এনে বীজতলায় ঢালছি। যদি বাঁচে।'

ভাতার ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা বিপ্লব প্রতিহার বলেন, 'আমাদের ব্লকের কয়েক'টি এলাকা ছাড়া সব জায়গাতেই সাব মার্সিবলের জলেই বীজতলা তৈরি হয়েছে। তবে বৃষ্টি নেই। আকাশে মেঘ হলেও বৃষ্টি হচ্ছে না। আমাদের ব্লকেরও কয়েক'টি গ্রামে ফাটল ধরেছে বীজতলায়।' গলসি-২ ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা সরোজ ঘোষ বলেন, 'বৃষ্টি না হলে বীজতলা বাঁচবে না। সেচ দপ্তর থেকে সোমবার থেকে সেচ ক্যানালের মাধ্যমে জল দেওয়ার কথা। সেই জল এলে চাষ বাঁচবে। তবে চাষের খরচ বেড়ে যাবে অনেকটাই। এতদিন যে ধান রোয়া হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেটা এখনও হয়নি। কবে হবে সেটাও প্রশ্নের মুখে।'