মায়ের কোল থেকে সন্তান অপহরণ! নিয়ম করে এই কাজই করত দেশের সরকার


১৯৪৫ থেকে প্রায় ১৯৭১ সাল পর্যন্ত, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের কুমারী মায়েদের কাছ থেকে তাদের সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে নেওয়া হতো। এবং সেই শিশুদের দত্তক দেওয়া হতো কোনও দম্পতিকে। 


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বেশ কয়েক দশক ধরে এক আজব নিয়ম প্রচলিত ছিল কানাডা-সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায়। আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম, যেমন 'দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট', 'দ্য ব্লেজ', 'দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল'-এ সম্প্রতি ট্রেন্ডিং হয়েছে সেই ভয়াবহ নিয়মের কথাই।
প্রতিবেদনগুলি থেকে জানা গিয়েছে যে, ১৯৪৫ থেকে প্রায় ১৯৭১ সাল পর্যন্ত, কানাডা-সহ উক্ত দেশের কুমারী মায়েদের কাছ থেকে তাদের সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে নেওয়া হতো। এবং সেই শিশুদের দত্তক দেওয়া হতো কোনও দম্পতিকে। 

এই কাজে প্রশাসনের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে কাজ করত বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও। জানা গিয়েছে, ক্যাথলিক নান-রাই মূলত এই কাজে সরকারের সহায়তা করতেন।

গত বৃহস্পতিবার, কানাডার সেনেটের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে 'সোশ্যাল অ্যাফেয়ার' নিয়ে আলোচনার সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন এমন অনেক মা, যাঁরা সন্তানের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা ভোলেননি এখনও।

সেনেটের সেই আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন ভ্যালেরি অ্যান্ডুজ, যিনি 'অরিজিনস কানাডা' নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার। অন্যান্য বেশ কিছু মহিলার মতো, মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাঁকেও তাঁর সন্তানের থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল। তাই তিনি ব্রতী হন সেই সব কুমারী মায়েদের সন্তানদের খুঁজে বের করতে। প্রসঙ্গত, তিনি তাঁর পুত্রসন্তানকে খুঁজে পান প্রায় ৩১ বছর পরে।

সেনেটের সেই আলোচনা সভায় অনেক মা জানান তাঁদের জীবনের সেই হৃদয় বিদারক ঘটনার কথা। সন্তানের জন্মের পরেই শিশুদের নিয়ে যাওয়া হতো অন্যত্র। অনেক ক্ষেত্রে মায়েরা জানতেই পারতেন না তিনি পুত্রের জন্ম দিয়েছেন, নাকি কন্যার। আবার অনেক সময়ে মায়েদের মিথ্যে বলা হতো যে, তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেছেন।

কুমারী মেয়ে মা হলে সমাজে বদনাম হবে, সে কারণেই পরিবারের তরফ থেকে সন্তানসম্ভবা মেয়েদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো 'ম্যাটারনিটি হোম'-এ। আর সেখানেই ঘটে যেত যত অঘটন।
এই মর্মে 'ন্যাশনাল অ্যাপোলজি' চাওয়া হয় অস্ট্রেলিয়ায়। এবং তা দেখেই কানাডাবাসী উদ্বুদ্ধ হন। ২০১৬ সালে, 'অরিজিনস কানাডা'র তরফ থেকে প্রশাসনের কাছে আছে দাবি রাখা হয় এক এনকোয়ারির জন্য। যেখানে, সেই সব মায়েরা এসে তাঁদের কথা বলতে পারবেন। প্রসঙ্গত, এমন দাবি উঠেছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও উত্তরই পাওয়া যায়নি।