সরকারি শর্ত মেনে সন্তান হলে ১০ থেকে ১৯ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাতা


নয়াদিল্লি : বিয়ের পরেই বধূকে যাতে দ্রুত এবং একাধিক সন্তানের জন্ম দেওয়া উপর জোর না দেওয়া হয়, তার জন্য এবার শাশুড়ি-বউমা সম্মেলনের বাড়তি উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্র। জন্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পরিবার কল্যাণের বিষয়টিতেও জোর দিতে এই উদ্যোগ বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। শাশুড়ি-বউমা সম্মেলনের পাশাপাশি দারিদ্র্যসীমার নীচে (বিপিএল) বসবাসকারী দম্পতিদের সচেতনতা বাড়াতে আর্থিক সহায়তার উপরও জোর দিচ্ছে মোদি সরকার। সরকারের গাইডলাইন মেনে সন্তানের জন্ম দিলে মিলবে ১০ থেকে ১৯ হাজার টাকার ইনসেনটিভ বা উৎসাহভাতা। যদিও সেক্ষেত্রে দুটির বেশি সন্তানের জন্ম দেওয়া চলবে না বলেই কড়া শর্ত রেখেছে সরকার। মূলত জন্মহার বেশি, গোটা দেশের এমন সাতটি রাজ্যের ১৪৬টি জেলায় এই কর্মসূচিতে জোর দেওয়া হলেও কমবেশি গোটা দেশেই তা পালন করার হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। 
মন্ত্রকের সমীক্ষা অনুযায়ী, পরিবারে, বিশেষত গরিব নিন্মবর্গের মধ্যে এখনও মূলত শাশুড়িরা তার বউমাকে দ্রুত সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য চাপ দেন। সেই চাপে পড়ে অনেক সময়ই সন্তান জন্ম দেওয়ার স্বাস্থ্যকর বয়স অথবা দু'টি সন্তানের জন্মের মধ্যে সময়ের ফারাক কম হয়। এর জন্য আদতে পরবর্তীকালে মা এবং সন্তানকে অনেক সময় নানান শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়। যা পরবর্তীকালে মানসিক সমস্যার জন্ম দেয় বলেই মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞদের মত। তাই রাজ্যগুলির সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণে শাশুড়ি এবং বউমাদের নিয়ে বিশেষ সম্মেলন ও কর্মশালা করতে চাইছে কেন্দ্র। একইসঙ্গে বিপিএল পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে সাধারণ পরামর্শের পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে উৎসাহভাতা। তা পাওয়ার নিয়ম কীভাবে বেঁধেছে কেন্দ্র? মন্ত্রক জানিয়েছে, অবশ্যই হতে হবে বিপিএল। এমনিতে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ হলেও এক্ষেত্রে ১৯ বছর বয়সের আগে বিয়ে হওয়া চলবে না। কমপক্ষে বিয়ের দু'বছরের পর প্রথম সন্তানের জন্ম হতে হবে। তিন বছরের আগে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেওয়া চলবে না। দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার এক বছরের মধ্যে স্বামী অথবা স্ত্রী যেকোনও একজনকে চিরকালের জন্য পরিবার কল্যাণের ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ আর যাতে ওই দম্পতি সন্তানের জন্ম দিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিয়ের দু'বছর পর জন্মানো সন্তান পুত্র হলে মিলবে ১০ হাজার টাকার উৎসাহভাতা। কন্যা হলে ১২ হাজার টাকা। সব শর্ত পূরণ করে একটি পুত্র ও একটি কন্যার জন্ম দিলে মিলবে ১৭ হাজার টাকা। একইভাবে উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে দু'টি কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে কেন্দ্র ওই দম্পতিকে সব মিলিয়ে দেবে ১৯ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং জন্মহারের (টিএফআর বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট) ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের প্রশংসাও করেছেন নাড্ডা। গোটা দেশের গড় টিএফআর যেখানে ২.২, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে টার্গেট ২.১, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ এখনই ১.৬। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গ বরাবরই স্বাস্থ্যসচেতন রাজ্য। তাই পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে আমাদের উদ্বেগ কম। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড এবং অসমকে নিয়েই আমাদের চিন্তা। ঘটনাচক্রে প্রায় সবক'টিই তো এখন বিজেপি-এনডিএ শাসিত রাজ্য। পাল্টা প্রশ্ন করার চুপ করে যান নাড্ডা। বলেন, স্বাস্থ্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাজনীতি নয়। 
গোটা বিশ্বের মধ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভারতের স্থান দ্বিতীয়। চীনের পরেই। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং পরিবার কল্যাণের উপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশনের বিষয়ে যেমন বিবাহিত দম্পতিদের সচেতন করতে চাইছে, একইভাবে পরিবারের সদস্যদেরও জুড়তে চাইছে। জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টি 'লজ্জা'র আভরণে না ঢেকে পরিবার এবং সমাজকল্যাণের অঙ্গ হিসেবে দেখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।