নিয়োগপত্র থেকে বেতন, গোটা চাকরিই জাল!


জাল নিয়োগপত্রই শুধু নয়, প্রতারকেরা এ বার বাজারে নেমেছে জাল চাকরি নিয়ে!

কী রকম? প্রার্থীকে প্রথমে দেওয়া হত সরকারি চাকরির জাল নিয়োগপত্র। পরে জাল পরিচয়পত্র, এমনকি নিয়মিত বেতনও দেওয়া হত তাঁদের। দফায় দফায় সেই বেতন বাড়ানো হত, কাজ খারাপ হলে সাসপেন্ডও করা হত। অথচ, প্রতারিতেরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারতেন না যে, পুরো বিষয়টিই সাজানো। অভিনব এমনই পদ্ধতিতে কয়েক বছর ধরে কয়েকশো মানুষকে ঠকানোর পরে শেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল ওই চক্রটি।

পুলিশ জানিয়েছে, হেয়ার স্ট্রিট থানায় সুরজিৎ চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুরো দলটিকে ধরে তারা। ধৃতদের নাম শুভব্রত মজুমদার, তন্ময় সামন্ত, নিশান বাঁশফোর, আবু জাফর মণ্ডল ও খুরশিদ আলম। লালবাজারের গোয়েন্দা-প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ''ওই চক্রে আরও কয়েক জনের নাম উঠে আসছে। জানা গিয়েছে, কয়েকশো মানুষকে ঠকিয়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার প্রতারণা করেছে এই দলটি। বেশ কয়েক বছর ধরে এই চক্র সক্রিয়।''


পুলিশ জানিয়েছে, বন, স্বাস্থ্য, দমকল, মৎস্যের মতো বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরির সুযোগ পাওয়া যাবে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিত এই প্রতারণা চক্রটি। তা দেখেই এদের পাল্লায় পড়েন সুরজিৎ। তাঁকে বন দফতরের আরামবাগ-বাঁকুড়া রেঞ্জে 'চাকরি' দেওয়া হয়। বিনিময়ে নেওয়া হয় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। তাঁর চাকরির নিয়োগপত্রে বন দফতরের এক কর্তার স্বাক্ষরও ছিল। সুরজিৎ পুলিশকে জানিয়েছেন, আরামবাগে তাঁকে থাকার জায়গাও দেওয়া হয়। এমনকি মাসের প্রথমে বেতনও দেওয়া হত। প্রথম এক বছরে কিছুই বুঝতে পারেননি তিনি। নিজের এক আত্মীয়কেও ওই ভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন সুরজিৎ।

বিশ্বাস অর্জনের জন্য এ ভাবেই জাল বিস্তার করেছিল চক্রটি। ফলে সুরজিৎ বা তাঁর আত্মীয়ই শুধু নন, অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারেননি যে, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। সুন্দরবনের বনরক্ষী পদে বেশ কয়েক জনকে 'নিয়োগ' করে ওই চক্র। বিনিময়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হয় লক্ষাধিক টাকা। প্রতারিতেরা সকলে একসঙ্গে একটি কোয়ার্টার্সে থাকতেন। নিয়মিত বেতনও পেতেন। কাজ ভাল করে না করায় কয়েক জন সাসপেন্ডও হন। কী করে ধরা পড়ল ওই চক্র? পুলিশ জানিয়েছে, এক বছর পরে সুরজিতের বেতন অনিয়মিত হতে শুরু করে। তিনি দেখেন, অন্য কয়েক জনেরও বেতন নিয়মিত হচ্ছে না। তখন তাঁরা নিয়োগ নিয়ে খোঁজ শুরু করতেই অসঙ্গতি পান। শেষে সুরজিৎ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।