ফ্ল্যাটে অগ্নিদগ্ধ মা-মেয়ে, মৃত্যু ঘিরে রহস্য


ধোঁয়ায়-আগুনে দেখা যাচ্ছিল না ঘরের কিছু। আগুন নিভতেই দমকলকর্মীরা দেখেন, শোয়ার ঘরে মেঝের উপরে পাশাপাশি পড়ে রয়েছে মা দীপ্তি মুখোপাধ্যায় (৭৫) ও মেয়ে স্বাতী মুখোপাধ্যায়ের (৫৩) দগ্ধ দেহ। পুলিশ সূত্রের খবর, স্বাতীর দু'হাতের কব্জিতে ও গলায় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। মেয়ের দেহের অদূরে পাইপ খোলা অবস্থায় রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। সিলিন্ডারের মুখে পোড়া দাগ। শুক্রবার বিকেলে দমদমের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে মল রোডের এক আবাসনের ফ্ল্যাটে এই দৃশ্য দেখেই থানায় খবর দেয় অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আসা দমকল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ২) আনন্দ রায় বলেন, ''সমস্ত সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তদন্ত হচ্ছে।"

স্থানীয় সূত্রের খবর, কাছেই দীপ্তিদেবীর নিজস্ব একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। কিন্তু তিনি ওই আবাসনে মেয়ে স্বাতী ও জামাই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেই তাঁদের ফ্ল্যাটে থাকতেন। এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওই ফ্ল্যাটের শোয়ার ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা দমকলে খবর দেন। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দরজা কেটে ঘরে ঢোকেন দমকলকর্মীরা। প্রবল ধোঁয়ায় কোন দিকে শোয়ার ঘর, তা প্রথমে বুঝতে পারেননি তাঁরা। খাওয়ার ঘরে ঢুকেই রক্তের ফোঁটা দেখতে পান তাঁরা। এটা যে নিছক অগ্নিকাণ্ড নয়, তখনই সেই সন্দেহ দানা বাঁধে। এর পরে শোয়ার ঘরে ঢুকে আগুন দেখে দমকলকর্মীরা তা নেভানোর কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু জিনিসপত্রে ঠাসা ওই ঘরে দু'টি শরীরও যে জ্বলছে, তখনও তাঁরা তা বুঝতে পারেননি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতেই দেহ দু'টি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় দমকল। নিরাপত্তারক্ষী শঙ্কর সাহার কথায়, ''মেয়ের দেহ চিৎ হয়ে পড়ে ছিল। দু'টি হাত ছিল মাথার দিকে ছড়ানো। মায়ের দেহ পাশে উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। স্বাতী বৌদির হাতের শিরা ও গলায় ক্ষতচিহ্ন ছিল। মায়ের দেহ পুরোপুরি পুড়ে যাওয়ায় কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। চামড়া পুড়ে হাড়গোড় দেখা যাচ্ছিল।"

পুলিশ সূত্রের খবর, শৌচাগারে রক্তে ভেজা একটি রুমাল মিলেছে। তবে এখনও পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে ধারালো কোনও অস্ত্র মেলেনি। দমকল সূত্রের খবর, বিছানাতেও আগুন লেগেছিল। এবং তা লাগানো হয়েছিল বলেই অনুমান। কী কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে, সে বিষয়ে এ দিন মুখ খোলেননি স্বাতীর স্বামী, একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানার ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রতবাবু। তদন্তকারীদের তিনি জানিয়েছেন, স্বাতী বড়বাজারে গিয়েছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ সেখান থেকে নিজেদের গাড়িতে তিনি মল রোডের আবাসনে ফিরে আসেন। নিরাপত্তারক্ষী শঙ্করবাবুর দাবি, ''এর কিছু ক্ষণ পরেই সুব্রতবাবুর ফ্ল্যাট থেকে মা ও মেয়ের চিৎকার শুনতে পেয়ে আমরা সি ব্লকের দোতলায় যাই। কিন্তু বেল বাজালেও সাড়াশব্দ না পেয়ে ফিরে আসি।'' নিরাপত্তারক্ষীদের দাবি, তাঁরা নীচে নামার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে ধোঁয়া দেখতে পেয়ে দমকলে খবর দেন। মা ও মেয়ে ছাড়া ওই সময়ের মধ্যে আর কেউ ওই ব্লকে যাননি বলেই দাবি রক্ষীদের। শঙ্করবাবুর কথায়, ''আমি যখন ঘরে ঢুকি, তখন ডাইনিং টেবিলে একটা ফোন ক্রমাগত বাজছিল। শোয়ার ঘরের শোকেসেও একটা মোবাইল আর ট্যাব ছিল। পুলিশ সেগুলি
নিয়ে গিয়েছে।''

ডিসি (জোন ২) বলেন, ''আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রেক্ষিতে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। ময়না-তদন্তের পরে তদন্তের অভিমুখ স্পষ্ট হবে।" পুলিশ সূত্রের খবর, মেঝের উপরে স্বাতীর দেহের কাছে একটি পুতুল রাখা ছিল, যেটি সেখানে থাকার কথা নয়। পুতুলের ওই অবস্থান কি কোনও কিছুর ইঙ্গিতবাহী? এক তদন্তকারীর কথায়, ''মানুষের মন বড় জটিল। কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।"