কেরানি কম পড়েছে, বেজায় চিন্তায় নবান্ন !


সচিবালয়ে দ্রুত অবরবর্গীয় সহায়ক নিয়োগের জন্য তদ্বির শুরু করেছে নবান্ন।


কেরানি সঙ্কট সচিবালয়ে!

গত আট বছরে সচিবালয়ে কোনও 'অবরবর্গীয় সহায়ক' বা লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক নিয়োগ হয়নি। ফলে সচিবালয়ের প্রায় সমস্ত অবরবর্গীয় পদোন্নতি পেয়ে  'উত্তরবর্গীয় সহায়ক' বা আপার ডিভিশন ক্লার্ক হয়েছেন। এবং তাঁরা বলছেন, কেন আর অবরবর্গীয়দের কাজ করবেন। অথচ সরকারি  ফাইল আর তাতে লেখা নানান নীতি-নির্দেশ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অবর এবং উত্তরবর্গীয়দের হাতেই। অবরবর্গীয়দের মূল কাজ নতুন ফাইল খুলে তা সিদ্ধান্তের জন্য উপরের দিকে পাঠানো। অন্য দিকে  উত্তরবর্গীয়রাই প্রশাসনের প্রথম 'বাবু'। যাঁরা ফাইলে নোট দিয়ে যে কোনও সিদ্ধান্তে নিজেদের শরিক ভাবেন। এখন উত্তরবর্গীয়দের ফাইল তৈরি থেকে তা পাঠানো সবটাই করতে হচ্ছে। যদিও চতুর্থ শ্রেণি থেকে পদোন্নতি পেয়ে শ'খানেক কর্মী এখন কেরানি হয়েছেন।

এই অবস্থায় সচিবালয়ে দ্রুত অবরবর্গীয় সহায়ক নিয়োগের জন্য তদ্বির শুরু করেছে নবান্ন। বার দু'য়েক তাগাদার পর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন নবান্নের কর্তারা। তাঁদেরই এক জনের আশা, 'মাস দুয়েকের মধ্যেই সচিবালয়ে ৮৩৪ এবং ডাইরেক্টরেটে ৩০০ কেরানি নিয়োগ সম্ভব হবে।''

কেরানি সংবাদ
• সচিবালয়ে কেরানি পদ ২২০০
• এখন কেরানি ১০০-র কিছু বেশি
• ২০০৮-এর পর পিএসসি'র নিয়োগ বন্ধ
• কেরানিরা সকলেই পদোন্নতি পেয়েছেন
• দু'মাসে নিয়োগ হতে পারে  ১১৩৪ জন।

কেন এই সমস্যা? নবান্নের বক্তব্য, সচিবালয়ের জন্য প্রতি বছর কেরানি নিয়োগ করত পাবলিক সার্ভিস কমিশন। তারা এই পদের জন্য সর্বশেষ পরীক্ষা নিয়েছিল ২০০৮ সালে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ২০১০ সালে কেরানি পদে যোগ দেন। আট বছর পর পদোন্নতি পেয়ে তাঁরা সকলেই ২০১৭-১৮-তে সকলেই  আপার ডিভিশন ক্লার্ক হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী কালে আরও কোনও নিয়োগ হয়নি। তাই প্রশাসনের তৃণমূলস্তরে কেরানি আর নেই। ইতিমধ্যেই চতুর্থ শ্রেণির শ'খানেক কর্মী পদোন্নতি পেয়ে কেরানি হয়েছেন। তাঁরাই এখন সচিবালয়ে 'অবরবর্গীয়'দের প্রতিনিধি বলে জানাচ্ছেন এক কর্তা।

গত ১০ বছরে নিয়োগ হল না কেন? নবান্নের খবর, পিএসসি-র উপর থেকে পরীক্ষা নেওয়ার চাপ কমাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১২-য় স্টাফ সিলেকশন কমিশন গঠন করেন। তাদের উপরই দেওয়া হয়েছিল কেরানি ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মী নিয়োগের ভার। কমিশন ২০১৬ সালে সব মিলিয়ে সচিবালয়ের ৮৩৮ এবং ডাইরেক্টরেটের ৩০০ কেরানি নিয়োগের পরীক্ষাও নেয়। তার মধ্যেই ২০১৭-এ সরকার স্টাফ সিলেকশন কমিশন গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। বলে দেওয়া হয় নিয়োগের অসমাপ্ত কাজ শেষ করবে পিএসসি। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি।

কবে মিটবে এই সমস্যা?
নবান্নের এক কর্তা জানান, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কম্পিউটার পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। তা শেষ হওয়ার পরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইতিমধ্যেই ডিসেম্বর ও জুন মাসে দু'দফায় পিএসসি'কে চিঠি দিয়ে দ্রুত কেরানি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে সরকারি কাজ করার ক্ষেত্রে এখনও কেন ভাগাভাগি, সে প্রশ্নও উঠেছে। ই-গর্ভন্যান্সের যুগে কেরানি আর অফিসারদের কাজের প্রকারভেদ করাও এখন বেশ কঠিন বলে মনে করেন কর্তাদের একাংশ। এক কর্তার কথায়, ''এখন তো অধিকাংশ চিঠি লেখার কাজ বা টাইপ করার কাজ নিজেরাই করে নিই। যা কেরানিদের করার কথা। তা হলে লোয়ার ডিভিশন, আপার ডিভিশন ক্লার্কের কাজের ভেদ থাকবে কেন?''