অনলাইনে প্রতারণার ফাঁদ, উপহারের লোভ দেখিয়ে তরুণীর সর্বস্ব লুট ‘বন্ধু’র


উপহার দেবে বিদেশি বন্ধু। তাই আনন্দ সামলে রাখতে পারেননি শহরের এক যুবতী। বিলেত থেকে দিল্লির বিমানবন্দরে এসেই গিয়েছে বন্ধুর দেওয়া বহুমূল্যের উপহার। আর ওই উপহার পেতে গেলে  শুল্ক দপ্তরকে কিছু টাকা দিতে হবে। কিছু টাকা দেওয়ার পর তাঁকে পাঠানো হয়েছিল শুল্ক দফতরের রসিদ। তা দেখে উৎসাহিত হয়ে তিনি আরও টাকা পাঠাতে থাকেন। যখন বুঝতে পারলেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন, তখন প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছেন যুবতী। কয়েক দফায় তিনি প্রতারকদের দিয়ে দিয়েছেন তাঁর সারা জীবনের জমানো ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

সম্প্রতি এই বিষয়ে তিনি লালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগের আঙুল ফামিদা, ফিরোজ, আকাম্বো ও তসলিমার বিরুদ্ধে। এদের অ্যাকাউন্টেই টাকা পাঠিয়েছিলেন তিনি। যদিও এদের  নাম ও অ্যাকাউন্টগুলি ভুয়ো বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দারা অনেকটাই নিশ্চিত যে, শুল্ক দফতরের ভুয়ো রসিদ পাঠানো হয়েছিল ওই যুবতীকে। পুলিশ জানিয়েছে, কড়েয়ার বাসিন্দা ওই যুবতীর একটি ফেসবুক প্রোফাইল রয়েছে। লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজ রোডের বাসিন্দা এক ফেসবুক বন্ধু যুবতীর সঙ্গে প্রায়ই চ্যাট করতেন। তাঁর সঙ্গে হোয়াটস্ অ্যাপেও যোগাযোগ হত। গত মাসে ওই বন্ধু যুবতীকে বলে, বন্ধুত্বের খাতিরে তিনি তাঁকে আইফোন, হ্যান্ডব্যাগ, ল্যাপটপ, সোনার গয়না ও ৬০ হাজার পাউন্ড পাঠাচ্ছেন।

কয়েকদিন পর তাঁকে এক মহিলা ফোন করে নিজেকে ক্যুরিয়র সংস্থার কর্মী দীপিকা বলে পরিচয় দেয়। জানায়, উপহারগুলি দিল্লি বিমানবন্দরে এসে গিয়েছে। ছাড়ানোর জন্য আকাম্বো বলে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে দিতে হবে ২৮ হাজার টাকা। ওই টাকা দেওয়ার পরই তাঁকে দীপিকা বলে গয়নার শুল্ক হিসাবে আকাম্বোর অ্যাকাউন্টে আরও ১ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে তিনি ওই টাকা জমা দেন। পরের দিন তাঁকে বলা হয় কয়েকটি সমস্যার জন্য এখনও আটকে রয়েছে উপহারগুলি। সেগুলি পেতে গেলে তাঁকে দিতে হবে আরও আড়াই লাখ টাকা। পাঁচটি অ্যাকাউন্টে চারজনের নামে ৫০ হাজার টাকা করে পাঠানোর পর তাঁর সন্দেহ হয় কেন তাঁর কাছ থেকে এত টাকা চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা প্রায় শেষ। এরপরও তাঁকে ফোন করে বলা হয় আরও ১ লাখ টাকা দিতে। তিনি জানিয়ে দেন, তিনি কোনও টাকা দেবেন না। এবার লন্ডনের সেই বন্ধু ফোন করে তাঁকে বলে যে, ওই এক লাখ টাকা দিলেই তাঁর হাতে চলে আসবে উপহার।  সে অনেক টাকা দিয়ে বান্ধবীর জন্য উপহার কিনেছে। ততক্ষণে যুবতী বুঝতে পেরেছেন তাঁকে ফাঁদে ফেলেছে প্রতারকরা। তিনি টাকা দেবেন না বলে জানিয়ে দেওয়ার পর তাঁকে লন্ডনের বন্ধু কটূক্তি করে তাঁর হোয়াটস অ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার ব্লক করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে যুবতী তাঁর পরিচিতদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর পর পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। পুলিশ জানিয়েছে, উপহারের লোভ দেখিয়ে প্রতারণা বেড়েই চলেছে।

কয়েকদিন আগে এন্টালির এক প্রৌঢ়াও একই ধরনের অভিযোগ করেন। পুলিশের ধারণা, এর পিছনে একটি আন্তর্জাতিক চক্র রয়েছে, যার এজেন্টরা রয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরে। দেখা গিয়েছে, একা থাকেন এমন মহিলাদেরই 'টার্গেট' করছে এই চক্র। এই বিষয়ে শহরবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।