শহরে রমরমিয়ে চোরাই বাইকের কারবার, টাকা যাচ্ছে বাংলাদেশি জেহাদিদের তহবিলে

বাইক পাচারচক্রের টাকা যাচ্ছে জঙ্গি তহবিলে। কলকাতা ও বিভিন্ন জেলা থেকে চুরি করা বাইক বাংলাদেশে পাচারের সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে কয়েকজন জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি গ্রেটার নয়ডা থেকে উত্তরপ্রদেশের এটিএস ও কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে দুই বাংলাদেশি জেএমবি জঙ্গি মোশারফ ও রুবেল। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, তাদের জেরা করেই মিলেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধৃত দুই জঙ্গিও বাংলাদেশে বাইক চুরির চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সেই টাকা যে জঙ্গি কার্যকলাপে কাজে লাগানো হত, সেই তথ্য এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, রাজ্যে নতুন করে মডিউল তৈরির ভার দেওয়া হয়েছিল দুই জঙ্গি মোশারফ ও রুবেলকে। নতুন মডিউল তৈরি, নাশকতার জন্য জিনিসপত্র কেনা ও জেএমবি-র জন্য নতুন করে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই টাকা কাজে লাগানো হচ্ছিল। নতুন মডিউল তৈরির কাজে এবার মালদহ, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো কয়েকটি জেলাকে জঙ্গিরা বেছে নিয়েছে বলে খবর পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এই মডিউল তৈরির কাজে জঙ্গিদের কোন 'হ্যান্ডলার' নির্দেশ দিত, সেই তথ্য জানতে তাদের দফায় দফায় জেরা চলছে। এমনকী, নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য মোশারফ ও রুবেলের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে 'পলাতক' কুখ্যাত অন্য দুই জেএমবি জঙ্গি রিপন ও খালিদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রেখে চলত, এমন সম্ভাবনা গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে ধৃতদের সঙ্গে যে বাংলাদেশ ও এই রাজ্যের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, সেই বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত গোয়েন্দারা। তাদের মধ্যে কেউ জেএমবি জঙ্গিদের 'হ্যান্ডলার' কি না, তা গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন।

জানা গিয়েছে, এর আগে জেএমবি বীরভূম, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদে মডিউল তৈরি করেছিল। তৈরি করেছিল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর তাদের এই নেটওয়ার্ক ভেঙে যায়। এর পরও নিও জেএমবি নেতা সালাউদ্দিন ও বোমারু মিজান নতুন করে মুর্শিদাবাদে মডিউল তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু সেই মডিউলও ভেঙে দেয় লালবাজারের এসটিএফ। এবার মালদহ, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মডিউল তৈরির চেষ্টা করছে জেএমবি জঙ্গিরা। এমনকী, তারা কলকাতায় একাধিকবার এসেছে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। বিভিন্নভাবে জেএমবি নতুন করে তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কলকাতা ও বিভিন্ন জেলা থেকে চুরি হওয়া বাইক বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে দুই দেশের চক্র বা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এই রাজ্য থেকে পাচার হওয়া বাইক বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় চড়া দামে বিক্রি করছে সিন্ডিকেট।

এই বাইক চুরির চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জেএমবির কয়েকজন মাথা। চোরাই বাইক বিক্রির টাকা তারা দিচ্ছে জেএমবির তহবিলে। এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে ধৃত দু'জনকে জেরা চলছে। এদিকে, ঢাকায় গুলশন হামলার দুই অভিযুক্ত জঙ্গি শরিফুল ইসলাম খালিদ ও মামুনুর রশিদ রিপন বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতের কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে বলে খবর এসেছে গোয়েন্দাদের কাছে। নতুন মডিউল তৈরির কাজে এই দুই জঙ্গির কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Highlights

জেএমবি-র জন্য নতুন করে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই টাকা কাজে লাগানো হচ্ছিল।

কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে দুই বাংলাদেশি জেএমবি জঙ্গি।

এই রাজ্য থেকে পাচার হওয়া বাইক বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় চড়া দামে বিক্রি করছে সিন্ডিকেট।