মুনাফার লোভেই ATM-এ নিরাপত্তাহীনতা, অভিযোগের কাঠগড়ায় সব ব্যাঙ্কই


কলকাতা : আছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ। ATM-এ ব্যবস্থা করতে হবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার। অভিযোগ, এই নির্দেশ মানে না কোনও ব্যাঙ্কই। অল ইন্ডিয়া রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখার পদস্থ কর্মী সুদীপ্ত সাহা রায়ের অভিযোগ, ব‍্যাঙ্কের অতিরিক্ত মুনাফার লোভের ফলে অরক্ষিত রাখা হচ্ছে ATM। মানা হচ্ছে না রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গাইডলাইন। ভরসা রাখা হচ্ছে শুধুই CCTV-র উপর। ব্যাঙ্ক প্রতারণার তদন্তে নেমে আবার কলকাতা পুলিশ দেখেছে, CCTV ফুটেজে নজর রাখে না কোনও ব‍্যাঙ্কই। আসলে ফুটেজ মনিটরিংয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও কর্মী রাখা হয় না। ফলে আমজনতার ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার কোনও সুরক্ষাই নেই বলে অভিযোগ।

ইতিমধ‍্যেই ধরা পড়েছে প্রতারণা চক্রের অন্যতম দুই পান্ডা। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, দুই রোমানিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত বিহারের একটি ATM কাউন্টারের বাইরে থেকে। গতকালই ইনাডু বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে সেই খবর। খবরের সত্যতা মেলে যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ), প্রবীণ ত্রিপাঠী গ্রেপ্তারির খবর দেওয়ার পর। ধৃতদের থেকে ক্লোন করা বেশ কিছু ATM কার্ড উদ্ধার হয়েছে। বেছে নেওয়া হয়েছিল ঢিলেঢালা নিরাপত্তার ATM ব্যবস্থাকে। দিল্লি থেকে চালানো হচ্ছিল অপারেশন। পশ্চিমবঙ্গের কেউ বুঝতেই পারছিলেন না কখন কোন ATM থেকে স্কিমারের মাধ্যমে ক্লোন করে নেওয়া হয়েছে তাঁর ATM কার্ড। দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত বিহারের ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ATM-র সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই দু'জনকে। ওই ATM কাউন্টার থেকে টাকা তোলার মতলবে ছিল তারা। মাস্ক পড়েই ঢুকছিল ATM কাউন্টারে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই ATM কাউন্টারটিতেও কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিল না।

অথচ ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মাদ্রাজ হাইকোর্ট একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল। দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে বলা হয়েছিল ATM কাউন্টারগুলিতে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে। এমনকী, নিরাপত্তারক্ষীদের বয়স ৪৫-র বেশি হওয়া চলবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্টের নির্দেশের পর রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। 

এ বিষয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্মী সুদীপ্তবাবু বলেন, "রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে পরিষ্কার নির্দেশিকা আছে, সব ATM-র নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে হবে। ভারতীয় ব‍্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশনও বলেছে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ATM-গুলির সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরী। সবাই একথা বলছেন। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি খরচ কমানোর অজুহাতে নিরাপত্তারক্ষী রাখছে না। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাগুলি বছরে ১০ লাখ কোটি টাকা সুদ দেয়। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীদের সরিয়ে দিয়ে ব্যাঙ্কগুলি কি খরচ কমাচ্ছে ? বোধগম্য হয় না। ব্যাপারটা হাস্যকরও। দেশে যেখানে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার কথা হচ্ছে, ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করা হচ্ছে, বলতে বাধ্য হচ্ছি সেখানে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা বিষয়গুলি খুবই দুর্বল।" 

ব্যাঙ্কের কন্ট্রাকচুয়াল কর্মী সংগঠনের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক ইন্দ্রনীল সরকার। তিনি নিজে একজন নিরাপত্তারক্ষী। তিনি গোলপার্ক কানাড়া ব্যাঙ্কের ঢিল ছোড়া দূরত্বে ডিউটি করেন। বলেন, "রাজ্যে প্রায় ২৫ হাজার ATM রয়েছে। কলকাতায় রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে অর্ধেক ATM-এ কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশে ATM লুটসহ যে কটি ঘটনা ঘটেছে, তার সবকটাই রক্ষীবিহীন ছিল। কলকাতায় যে ঘটনা ঘটেছে তাও রক্ষী থাকলে হত না। কানাড়া ব্যাঙ্কে কয়েক মাস আগেই তুলে নেওয়া হয় রক্ষী। তারপরেই এত বড় ঘটনা।" 

ইতিমধ্যেই দেশের কয়েকটি শহরে ব্যাঙ্কের তরফে ATM-এ উন্নত টেকনোলজি ব‍্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে প্রত্যেকটি ATM-এ নিরাপত্তারক্ষী রাখার জন্য। এ প্রসঙ্গে যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন,"আমরা ব্যাঙ্কগুলিকে বলেছি ATM-এ নিরাপত্তারক্ষী রাখার জন্য। দেখা যাক কী হয়।"