ATM জালিয়াতিতে অর্গানাইজ়ড ক্রাইম, কীভাবে কাজ করত চক্র?


কলকাতা : পুলিশের ভাষায় অর্গানাইজ়ড ক্রাইম। রীতিমতো ছক কষা চক্রান্ত। নিপুণ ম্যানেজমেন্টে তৈরি করা চক্র। এখনও পর্যন্ত যেটুকু সামনে এসেছে তা হিমশৈলের কণামাত্র। চক্রের মাথা গভীর জলের মাছ ! তবে কলকাতা পুলিশও নাছোড়বান্দা। আসলে এই মামলার সমাধান করে লালবাজার দেখিয়ে দিতে চাইছে, কেন তাদের তুলনা টানা হয় স্কটল‍্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে।

প্রত্যেকের জন্য ছকে বাঁধা কাজ। একদল আসে প্রকাশ্যে। ATM-এ লাগায় স্কিমার ও ক‍্যামেরা। কলকাতা, জয়পুর, আগ্রা, দিল্লি, পটনা, ভোপাল, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু থেকে কোহিমা। সর্বত্র তাদের গতিবিধি। প্রমাণ পেয়েছে SIT। এই দলে থাকে ইলেক্ট্রিশিয়ান ও ইলেকট্রনিক্স এক্সপার্টরাও। রেইকি করে পাওয়া তথ‍্যের ভিত্তিতে মানানসইভাবে তারা বানিয়ে দেয় ক‍্যামেরা লাগানোর বোর্ড। এই যেমন গতরাতে কলকাতায় গ্রেপ্তার হয় রোহিত নায়ার। মুম্বইয়ে এই যুবক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে B.TECH কোর্সে দু'বছর পড়েছে। তার সঙ্গী সুধীর রাজন আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। এখন থাকে মুম্বইয়ের মিয়া রোডে। পেশায় সে-ও ইলেকট্রিক্যাল টেকনিশিয়ান। এই দু'জন ডিভাইসগুলিকে সঠিকভাবে সেট করত। চক্রের মাস্টারমাইন্ডরা খুঁজে বেড়ায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবকদের। যেমন গতকাল কলকাতায় ধরা পড়া সাহিল খান। দু'বছর অস্ট্রেলিয়ায় ছিল সে। সেখানে বিয়ে করে গুয়েতামালার কিশোরীকে। ক‍্যাঙারুর দেশ থেকে ফিরে মুম্বইয়ে ব‍্যবসা। কিন্তু ইদানিং ব্যবসায় মন্দা। কিন্তু, আধুনিক লাইফস্টাইলে অভ‍্যস্থ সে। তাই বেছে নেয় অপরাধ জগত। এমন যুবকদেরই খোঁজে থাকে এই জগতের মাস্টারমাইন্ডরা। তাদের পরামর্শেই সাহিল নাম লেখায় ATM জালিয়াতদের খাতায়। মূলত সাহিলই বসাত স্ক্রিমিং ডিভাইস। তবে শুধু দেশি যুবকরা নয়। দেশজোড়া এমন অপরাধের ফ্রন্টাল টিমে ছিল বিদেশিরাও। সেই সূত্রেই ধরা পড়ে রোমানিয়ান ক‍্যালিন এবং সিমিয়ন। এখন চলছে এক নাইজেরীয়র খোঁজ।
এ তো গেল ফ্রন্টাল অর্গানাইজ়েশনের কথা। দেশি ও বিদেশি একদল যুবক স্কিমারে পাওয়া তথ্য ল‍্যাপটপের মাধ‍্যমে পৌঁছে দেয় এক্সপার্টদের কাছে। কার্ডের তথ্য সঠিকভাবে রিড করাটাই তাদের কাজ। একাজে মূলত ব‍্যবহার করা হয় শিক্ষায় কিংবা অভিজ্ঞতায় পুষ্ট IT এক্সপার্টদের। পরের ধাপে থাকে ক্লোন কার্ড তৈরিতে এক্সপার্টরা। তারা সময়ের মাপকাঠিতে পিন আর কার্ডের তথ্যের যুগলবন্দী তৈরি করে কাঁধের উপরে লিখে যায় পিন। 

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই কাজগুলিতে দেশি-বিদেশি কোনও বিভাজন নেই। অভিজ্ঞতা, মেধা আর শিক্ষার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কাজে লাগানো হয় প্রতারকদের। এব‍্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় ম‍্যানেজমেন্ট টিম। তা জানানো হয় মাস্টারমাইন্ডকে। তার সম্মতি এলেই কাজে নামানো হয় দেশি-বিদেশি প্রতারকদের। এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, "একাজে কোনও নির্দিষ্ট বিভাজন নেই। দেশি- বিদেশি মিলিয়ে তৈরি হয় টিম। তবে বারবার একই লোককে স্কিমার লাগাতে পাঠানো হয় না। কারণ, তাতে ধরা পড়ার ভয় থাকে।" 

পুলিশ সূত্রে খবর, চক্রে যোগ দেওয়া যুবকদের রীতিমতো ট্রেনিং দেওয়া হয়। বুঝিয়ে দেওয়া হয় কীভাবে করতে হবে কাজ। এর আগে দিল্লি, মুম্বই,পুনে কিংবা বেঙ্গালুরু পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে কয়েকজনকে। কিন্তু, সেভাবে বিষয়ের গভীরে ঢুকতে সক্ষম হয়নি তারা। কলকাতা পুলিশ চাইছে, মাস্টারমাইন্ডের কাছে পৌঁছতে। SIT তা পারে কি না সেটাই এখন দেখার।