৭৬৫ কেভির গ্রিড লাইন পাচ্ছে রাজ্য

দীর্ঘদিনের জট কাটিয়ে অবশেষে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পের কাজ ফের শুরু হতে চলেছে। এই প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন সবাই যখন অন্ধকারে, তখন নির্বিঘ্নেই রাজ্যের প্রথম ৭৬৫ কেভি ক্ষমতার রাঁচী-মেদিনীপুর-নিউ জিরাট গ্রিড লাইনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। পূর্বাঞ্চলের ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে ৭৬৫ কেভি-র গ্রিড লাইন থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সমিশন লাইন নেই। ৩১০০ কোটি টাকার এই গ্রিড ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্প রূপায়িত হলে এ রাজ্যে যে-কোনও সময়েই জাতীয় গ্রিড থেকে অতিরিক্ত  ৩৫০০-৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা যাবে। বিদ্যুৎ পরিষেবার মান উন্নত হবে খড়্গপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের কর্তাদের আশা, প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২০-র জুলাইয়ের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে ফেলতে পারবেন তাঁরা।

বিহারের পূর্ণিয়া থেকে ফরাক্কা হয়ে ভাঙড় পর্যন্ত পাওয়ার গ্রিডের ট্রান্সমিশন লাইনটি ৪০০ কেভি-র। ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের সাবস্টেশনের সঙ্গে ওই লাইন যুক্ত হয়ে গেলে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ রাজারহাট-নিউ টাউনের বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। কারণ ওই লাইন দিয়েও কমপক্ষে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা যাবে জাতীয় গ্রিড থেকে। শনিবার আলোচনার মাধ্যমে ভাঙড়ের জট কেটে যাওয়ায় রাজ্যের মধ্যে দু'টি শক্তিশালী গ্রিড লাইন তৈরি হয়ে যাবে বলেই বিদ্যুৎ শিল্প মহল মনে করছে। 

প্রস্তাব অনুযায়ী ৭৬৫ কেভি-র ট্রান্সমিশন লাইনের প্রথম সাবস্টেশন হবে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায়। ওই সাবস্টেশনের জন্য প্রায় ৮০ একর জমির ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। সেখানে কাজ শুরু করে দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভেল। নদিয়ার শিমুরালির কাছে নিউ জিরাটে দ্বিতীয় সাবস্টেশন তৈরির কাজও নির্বিঘ্নে শুরু হয়েছে। এই লাইন ঝাড়খণ্ডের রাঁচী থেকে প্রথমে গড়বেতা সাবস্টেশনে আসবে। সেখান থেকে ৭৬৫ কেভি-র একটি লাইন যাবে নিউ জিরাটে আর ৪০০ কেভি-র দু'টি লাইন যাবে খড়্গপুর ও হাওড়ার চণ্ডীতলায়। 
নিউ জিরাট থেকে আবার ৪০০ কেভি-র দু'টি ট্রান্সমিশন লাইন আসবে সোনারপুরের সুভাষগ্রামে পাওয়ার গ্রিডের সাবস্টেশন এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার জিরাট সাবস্টেশনে। ভবিষ্যতে নিউ জিরাট থেকেই আবার একটি লাইন মুর্শিদাবাদের গোকর্ণ হয়ে বিহারের গয়ায় পাওয়ার গ্রিডের সাবস্টেশনে গিয়ে মিলবে। এই ভাবেই গ্রিড লাইনের বৃত্তটি শেষ করার রূপরেখা তৈরি করেছে পাওয়ার গ্রিড।

রাজ্যের বিদ্যুৎকর্তাদের বক্তব্য, তাঁদের হাতে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ থাকলেও সেই বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে লাগবে বড় সাবস্টেশন। ভাঙড় গ্রিড প্রকল্পের সঙ্গে মেদিনীপুর-জিরাট গ্রিড লাইন তার জন্য আদর্শ। কারণ এই ধরনের গ্রিড লাইন দিয়ে শুধু বিদ্যুৎ আনা নয়, রাজ্যের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ বাইরে বিক্রি করতেও সুবিধা হবে।