এটিএম জালিয়াতির তদন্তে আটক রোমানিয়ার দুই যুবক


একটি এটিএমে যাওয়ার সময় তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

কলকাতার এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় মহানগরীতে এখনও কাউকে গারদে পোরা যায়নি। তবে ওই মামলায় দিল্লিতে রোমানিয়ার দুই যুবককে আটক করেছে কলকাতা পুলিশ। তাদের নাম দিমিত্রু ক্যালিন এবং ওপরিয়া ওভিদিউ সিমিয়ন।

লালবাজারের গোয়েন্দা-প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির মুনিরকা এলাকায় একটি মিষ্টির দোকানের পাশে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার এটিএম কাউন্টারে ঢোকার সময় দু'জনকে আটক করেন গোয়েন্দারা। ওই যুবকদের কাছে বেশ কিছু এটিএম কার্ড পাওয়া গিয়েছে। কলকাতায় বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের কয়েকটি শাখার এটিএম কাউন্টার থেকে অনেক গ্রাহকের টাকা লোপাটের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কালো শার্ট পরা দুষ্কৃতীদের কালো মুখোশে মুখ ঢাকা ছবি ছিল। দিল্লিতে আটক রোমানিয়ান যুবকদের কাছেও কালো শার্ট ও কালো রঙের মুখোশ পাওয়া গিয়েছে। উদ্ধার হয়েছে দু'টি পাসপোর্ট। ওই ফুটেজ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছে লালবাজার।

এক সময় ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনায় কলকাতা-সহ সারা দেশে নাইজিরীয় দুষ্কৃতীদের দাপট ছিল। কিন্তু গত বছরখানেক ধরে ব্যাঙ্ক ও এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় একাধিক রোমানিয়ান যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে নাইজিরীয়দের দাপট কমুক না-কমুক, রোমানীয় চক্রীদের তৎপরতা বেড়েছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মার্চে জয়পুরে তিন জন রোমানিয়ান যুবককে গ্রেফতার করা হয়। মে মাসে দিল্লিতেও একই অভিযোগে ধরা পড়েছে দু'জন রোমানিয়ান যুবক। ২৪ জুলাই পানজিমে রোমানিয়ার দুই যুবককে ধরে গোয়া পুলিশ। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে দুষ্কর্ম করে বেড়াচ্ছে রোমানিয়ার যুবকদের বিভিন্ন চক্র।

লালবাজার জানায়, দিল্লিতে আটক দুই বিদেশি যুবক গত মার্চে কলকাতায় এসে কসবার একটি হোটেলে উঠেছিল। মাস দুয়েক এখানে ছিল তারা। সেই সময়েই তারা বিভিন্ন ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে টাকা হাতানোর ব্যবস্থা করেছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ফুটেজের সূত্র ধরে কসবার হোটেলটিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। সেখানে খোঁজ নিয়ে ওই যুবকদের কলকাতায় আগমন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। কলকাতার বাসিন্দাদের কার্ডের তথ্য চুরি করে মে মাসে দিল্লি পালিয়ে গিয়েছিল দু'জনেই। তবে তারা কোন ধরনের ভিসা নিয়ে এ দেশে এসেছিল এবং তাদের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে কি না, তা জানাতে পারেননি কলকাতা পুলিশের কর্তারা।

লালবাজারের খবর, কলকাতায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কের এটিএমে 'কার্ড কপিয়ার' যন্ত্র বসিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সেই যন্ত্রের মাধ্যমে কার্ডের নথি হাতিয়ে দিল্লির দ্বারকা, মুনিরকা এলাকার এটিএম থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছিল। তার মধ্যে মুনিরকার একটি এটিএম-কে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা। দিল্লি পুলিশের সহযোগিতায় পাওয়া ২২ জুলাইয়ের একটি ফুটেজে দু'জনকে দেখা যায়। কলকাতার ফুটেজের সঙ্গে তার মিল পান তদন্তকারীরা। গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, দক্ষিণ কলকাতার একটি এটিএমের বাইরে দুষ্কৃতীদের খোলা মুখের ছবি পাওয়া গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার শনাক্তকরণের পরে তদন্তকারীরা ওত পাতেন এটিএমের বাইরে। রোমানিয়ার যুবকেরা আসতেই ঘিরে ফেলা হয় তাদের।

পুলিশের ধারণা, রোমানিয়ার শুধু ওই দু'জন নয়, এই চক্রে আরও কয়েক জন জড়িত। তারা কারা, তা জানতে দিল্লিতেই জেরা করা হচ্ছে আটক যুবকদের। কলকাতার কে কে চক্রে জড়িত, তা-ও জানার চেষ্টা হচ্ছে। লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি, 'রোমানিয়ান গ্যাং'-এর সদস্যেরা এক দফায় বেশি টাকা তুলত না। কারও অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ, কারও অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা লুটে নিত। যে-শহরে তারা শিকার করতে যেত, সেখানে 'রেকি' করে নিত। স্থানীয় কিছু 'কন্ট্যাক্ট'-ও তৈরি করেছিল তারা।