জেলবন্দি কর্নেলই কি এটিএম জালিয়াতির উপরওয়ালা


নিজের শহরে ছোটখাটো কাজ দিয়ে জীবন শুরু। তার পরে ধনী হওয়ার স্বপ্নের পিছনে ছুটতে ছুটতে অপরাধ জগতে প্রবেশ। বলিউ়ডি চিত্রনাট্যে এমন গল্প আকছার দেখা যায়। এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় দিল্লি থেকে গ্রেফতার হওয়া দুই রোমানীয় যুবক ওভিডিউ সিমন পপিস্কু এবং দিমিত্রু ক্যালিনকে জেরা করেও সেই একই কথা জানতে পেরেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।

তদন্তকারীরা জানান, রোমানিয়ার বিসতেতা শহরে পপিস্কু দরজা-জানলা বসানোর কাজ করত। ক্যালিন ছিল মোটর মেকানিক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে 'চাকরি' করতে এসেছিল পপিস্কু। পরে ক্যালিনকে সে জানায়, জালিয়াতি করে চটজলদি বড়লোক হওয়ার কাজের খোঁজ পেয়েছে। জুন মাসে এ দেশে ঢোকে ক্যালিন। ধৃতেরা জানিয়েছে, শিকারপিছু ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন পেত। বাকিটা নিত 'উপরওয়ালা'। সেই উপরওয়ালার হদিস এখনও পায়নি পুলিশ।

গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন, এর পিছনে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা-কর্নেল রয়েছেন। কার্ড জালিয়াতির মামলায় তিনি এখন তিহাড় জেলে বন্দি। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে দুই রোমানীয়কে পাকড়াও করার সময়ে আর এক ভিন্‌দেশি যুবক পালিয়েছে। তার খোঁজ চলছে। শনিবার দুই রোমানীয়কে কলকাতায় এনে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হলে তাদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক দীপাঞ্জন সেন। পুলিশ জানায়, ধৃতদের কাছ থেকে ২৬টি জাল কার্ড ও নগদ ১ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা মিলেছে। কলকাতা ছাড়াও পটনা, ভুবনেশ্বর থেকেও কার্ডের তথ্য হাতিয়েছে ধৃতেরা।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এ দেশে এসেছিলেন। আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তার মেয়াদ রয়েছে। বিসতেতায় মাসে ৬০০ থেকে ৮০০ ইউরো আয় করত পপিস্কু ও ক্যালিন। ভেবেছিল, বিদেশে এসে অনেক বেশি আয় করবে সে। সেই লোভে জালিয়াতি করতেও পিছপা হয়নি তারা।

বলেছে, এ সবের মাঝে আমোদফুর্তিও করত তারা। মাস খানেক আগে নেপাল, গোয়ায় ঘুরে এসেছে দু'জনে। তবে নেহাতই বেড়ানো নাকি সেখানেও জালিয়াতি করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ধৃতেরা জানিয়েছে, দিল্লিতে হাউজ খাসে বাড়ি ভাড়া করে থাকত তারা। জাল কার্ড তৈরি করে টাকা তুলত কাছেই মুনিরকা এলাকা থেকে। সেই এলাকা থেকেই ধরা পড়েছে তারা। এপ্রিলে কলকাতায় এসে কসবার হোটেলে উঠেছিল পপিস্কু। তখন তার সঙ্গে ক্যালিন নয়, অন্য এক রোমানীয় যুবকও ছিল। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী এ দিন বলেন, ''বড় কোনও চক্র এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। প্রয়োজনে আবার কলকাতা পুলিশের দল দিল্লি যাবে।''