স্বামীকে শিবের মাথায় জল ঢালতে পাঠিয়ে পথে সুপারি কিলার দিয়ে খুন


আসানসোল: 'কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বুকে লাগাতার ছুরি বসিয়ে ওকে শেষ করে দিয়েছি। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ও ছটফট করছে।' প্রেমিকের ফোন থেকে স্বামীকে খুন করার এমন নিখুঁত বর্ণনা শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিল বার্নপুরের নবঘন্টির রাজনন্দিনী সিং। বাড়ির সবাই কান্নায় ভেঙে পড়লেও তার মুখে ছিল জয়ের আনন্দ। অথচ এবছরেরই ১০ ফ্রেবুয়ারি তার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বিজয় সিংয়ের (৩০)। বিয়ের পরেই রাজনন্দিনী মুঙ্গেরের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তারপরেই সে স্বামীকে খুনের ছক কষে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত বিজয়বাবু গুজরাতের আমেদাবাদে নিরপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। সেখানেই তিনি সস্ত্রীক থাকতেন। দেওঘরে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার জন্য তিনি ৫ জুলাই স্ত্রীকে নিয়েই বার্নপুরের নবঘন্টিতে নিজের বাড়ি ফেরেন। ২৫ জুলাই তিনি দেওঘরের উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁর সঙ্গে আরও সাতজন ছিলেন। সুলতানগঞ্জ থেকে জল ভরে ১০৫ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে দেওঘরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সেইমতো তিনি বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করেন।

এদিকে স্ত্রীর পরিকল্পনা মতোই ওই রাস্তায় তাঁকে খুন করার জন্য সুপারি কিলার নিয়ে রাজনন্দিনীর প্রেমিক অপেক্ষা করছিল। সে স্বামীকে বারবার ফোন করে তাঁর অবস্থান জানতে চাইছিল। সেই তথ্য জেনে প্রেমিকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিল। স্ত্রী বিজয়বাবুকে বন্ধুদের পিছনে যেতে বলে। তার কথা শুনে তিনি ধীরগতিতে হাঁটতে থাকায় বন্ধুদের থেকে অনেকটাই পিছনে চলে আসেন। তখনই স্ত্রীর প্রেমিক সুপারি কিলারদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর বুকে এলোপাথাড়ি ছুরির কোপ মারতে থাকে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লে অপরেশনের কথা রাজনন্দনীর কাছে পৌঁছে দেয় তার প্রেমিক। পুলিস সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে। ২৬ জুলাই রাতে এই ঘটনা হলেও বিহারের বাঁকা জেলার কাটুরিয়া থানার পুলিস বুধবার তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে। দুজন সুপারি কিলারও গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু প্রেমিক অধরা থেকে গিয়েছে।

পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তদন্তকারীরা মৃত যুবকের মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে জানতে পারে খুন হওয়ার কয়েক মিনিট আগেও রাজনন্দিনী স্বামীকে ফোন করেছে। ঘনঘন তার মোবাইল থেকে ফোন এসেছে। এরপরেই পুলিসের সন্দেহের তালিকায় আসে তার স্ত্রী। তারপরেই তাকে ডেকে পুলিস জেরা শুরু করতেই সে ভেঙে পড়ে। এডিসিপি অনমিত্র দাস বলেন, বিহারের কাটুরিয়া থানাতে কেস হয়েছে। সেখানকার পুলিসই সব কিছু দেখছে।

মৃত যুবকের দাদা অমিত সিং বলেন, ২৭ জুলাই রাতেই জানতে পারি ভাই খুন হয়েছে। ওর কোনও শত্রু ছিল না। তাই ঘটনা শুনে আশ্চর্য হয়েছিলাম। খবর শুনেই ওর স্ত্রীকে খুনের কথা না জানিয়ে আমরা বিহারের উদ্দেশে রওনা দিই। ওকে বলেছিলাম ভাই পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়েছে। তাই ওকে দেখতে যাচ্ছি। সেসময় ওকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। ফ্রেবুয়ারি মাসে দেখাশোনা করেই ভাইয়ের রামবাঁধে বিয়ে দিয়েছিলাম। বিয়ের কয়েক মাস পরেই ভাইয়ের স্ত্রী নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফোনে ওরা প্রায়ই কথা বলত। কিন্তু এভাবে ও ভাইকে খুন করবে বলে কোনওদিনই ভাবতে পারেনি।