এম.এ পাস করে রাজমিস্ত্রির কাজে কেরালা পাড়ি, ঘরে ফিরছে নিথর দেহ


বন্যায় কোনও ত্রাণ গিয়ে পৌঁছয়নি সিরাজির হাতে। মেলেনি কোনও চিকিত্সা, প্রয়োজনীয় ওষুধ।


এম.এ পাস করে কাজের জন্য কেরলে পাড়ি দিয়েছিলেন কোচবিহারের যুবক সিরাজি আলম। বন্যায় আটকে পড়ে আর ঘরে ফেরা হল না। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের কাসিমের হাট এলাকার বাসিন্দা ছিলেন সিরাজি আলম।

জন্ম থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই। কিন্তু কখনওই হাল ছাড়েননি সিরাজি আলম। অনেক লড়াই করে পড়াশোনাটা চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তাঁর লড়াই, তাঁর পরিশ্রম তাঁকে বিফল করেনি। দারিদ্র্যের চোখে চোখ রেখে যুঝে এম.এ পাস করেছিলেন আলম। কিন্তু নিয়তি বড় নিষ্ঠুর। পড়াশোনায় ডিগ্রি অর্জন আর বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে রুটি-রুজি রোজগার করা, দুয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। এম.এ পাস করে সিরাজির শুরু হয়েছিল নতুন সংগ্রাম। জীবিকা অর্জনের সংগ্রাম। অনেক জায়গায় ঘুরেও একটা চাকরি জোটেনি। এদিকে পরিবারে অভাব নিত্য সঙ্গী। অনটনের সংসারে বাধ্য হয়েই এম.এ পাস করেও রাজমিস্ত্রির কাজ বেছে নেন সিরাজি।

রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গ্রামের অন্য যুবকদের সঙ্গে কেরল পাড়ি দিয়েছিলন সিরাজি। সেখানেই ঠিকাদারি সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন। কিন্তু কেরলের সর্বগ্রাসী বন্যা এবার সেটুকুও কেড়ে নিল। বন্যায় আটকে পড়েন সিরাজি। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বাড়ির সঙ্গে তাঁর সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় কোনও ত্রাণ গিয়ে পৌঁছয়নি সিরাজির হাতে। মেলেনি কোনও চিকিত্সা, প্রয়োজনীয় ওষুধ।

দিন দুয়েক আগে বাড়ির ছেলের মৃত্যু সংবাদ এসে পৌঁছেছে গ্রামে। তারপরই শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। গ্রামের মেধাবী ছাত্রের এমন মর্মান্তিক পরিণতি কেউ-ই মেনে নিতে পারছে না। বুধবার রাতে সিরাজির দেহ গ্রামে ফেরার কথা।

সিরাজির বাবা পেশায় ভ্যান চালক। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। আশা ছিল, ছেলে নিজের পায়ে দাঁড়ালে সংসারে দুটো টাকা আসবে। সেই টাকার জন্যই বাড়ি ঘরদোর ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল সিরাজি। কিন্তু, প্রকৃতির রোষের কাছে হার মানল সব লড়াই। ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বৃদ্ধ বাবা। সংসার কীভাবে চলবে, কোনও কূলকিনারা পাচ্ছেন না অশতিপর বৃদ্ধ।