দুর্ঘটনা রোধে দু’চাকার যান বিক্রিতে নজর

এই ছবি বদলাতে চায় প‌রিবহন দপ্তর।
রাজ্য জুড়ে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ঘটনা। সরকারি হিসেব মতে, ৬০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণই দু'চাকার যান। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার শিকার হচ্ছেন অল্প বয়সীরা। এ বার তাই ওই যানের উপরে নজরদারি বাড়াল পরিবহণ দফতর।
দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, বর্তমানে কলকাতা-সহ রাজ্যে ভারী ও ছোট মিলিয়ে ৯০ লক্ষ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। যার মধ্যে ৬৫ লক্ষ শুধু স্কুটার এবং মোটরবাইকই। যেহেতু পরিবহণ আইন কেন্দ্রীয় আইন, তাই রাজ্য এর কোনও পরিবর্তন করতে পারে না। সে কারণেই দুর্ঘটনায় রাশ টানতে মাস দেড়েক আগে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা।

যেমন, সরকারের তরফে জেলার পরিবহণ আধিকারিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়, বাইক এবং‌ স্কুটার বিক্রির আগে ক্রেতার নাম, পরিচয় এবং বয়স খতিয়ে দেখতে হবে। আগে স্কুটারের ক্ষেত্রে ১৭ বছর বয়সে লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম ছিল। তবে অভিভাবকের লিখিত অনুমতি বাধ্যতামূলক ছিল। এ জন্য তাঁদের উপস্থিতির দরকার ছিল না। এখন অভিভাবকের উপস্থিতিতে লিখিত অনুমতি বাধ্যতামূলক হয়েছে। দুর্ঘটনা কমানোর পাশাপাশি কম বয়সীরা যাতে যথেচ্ছ স্কুটার কিনতে না পারেন, তাই সরকারের তরফে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পাশাপাশি দু'চাকার গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের আগে মালিকের ঠিকানা পরীক্ষাও আগের থেকে কড়া হয়েছে। ঠিকানা যাচাইয়ের সময়েই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে কি না তা-ও যাচাই করে দেখছেন দফতরের আধিকারিকেরা।

মোটর ভেহিক্‌লস অফিসের কর্মীদের মতে, দু'রকম নিয়মে ধন্দে পড়ছেন তাঁরা। যদিও পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের কথায়, ''আইন বদল হয়নি। কেন্দ্রীয় আইন রাজ্য বদল করতে পারেও না। তবে সরকারের 'সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ' কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে মোটরবাইক বা স্কুটার বিক্রির সময়ে কিছুটা সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।'' দফতরের একাংশের মতে, দু'চাকার গাড়ি বিক্রির আগে ক্রেতার নাম, ঠিকানা যাচাইয়ের পিছনে দুর্ঘটনায় রাশ টানা একমাত্র কারণ নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে।
কী সেই কারণ? পরিবহণ কর্মীদের একাংশের ব্যাখ্যা, এক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা দলের নামে প্রচুর সংখ্যক দু'চাকার যান কিনছেন। ওই দলেরই এক নেতার অভিযোগ, ''মাস কয়েক আগে উত্তরপ্রদেশ থেকে কর্মী সমর্থকদের জন্য কয়েকশো বাইক আনা হয়েছিল। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও সেগুলির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে মামলাও করা হয়েছে।'' পরিবহণ কর্মীদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, সম্ভবত সে কারণেই সরকার চাইছে, দু'চাকার যানের উপরে রাজ্য জুড়ে কড়া নজরদারি চালানো হলে ওই রাজনৈতিক দলের তৎপরতা সম্পর্কেও জানা যাবে।
পরিবহণ দফতরের কর্তারা অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন এমন দাবি। তাঁদের মতে, দু'চাকার যান-দুর্ঘটনায় কম বয়সীদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে, তা ঠেকাতেই সরকারের এই তৎপরতা।