এবার পরকীয়ায় শুধু পুরুষ নয়, গ্রেফতার হতে পারে মহিলারাও


যদি কোনও পুরুষের অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, তা হলে তা অপরাধ ৷ তবে এ ক্ষেত্রে মহিলাটি অপরাধী হবেন না ৷ কিন্তু পুরুষটিকে অপরাধ প্রমাণ হলে ৫ বছর পর্যন্ত হাজতবাস করতে হতে পারে ৷


নয়াদিল্লি: ভারতীয় দণ্ড সংহিতার ৪৯৭ ধারা ৷ যে ধারায় নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে বিস্তর ফারাক করা হচ্ছে ৷ একই অপরাধের জন্য যেখানে কোনও পুরুষকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে ৷ সেখানে কোনও মহিলাকে কেন শাস্তি দেওয়া হবে না ? ব্যাভিচার রুখতে ৪৯৭ ধারার অবিলম্বে সংশোধনের দাবি উঠেছে ৷ পরকীয়া অপরাধ কিনা, সে বিষয়ে আইন খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে তত্ত্বাবধানে রয়েছে এই বিষয়টি ৷
৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় পরকীয়াকে পুরুষদের ক্ষেত্রে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ৷ যদি কোনও পুরুষের অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, তা হলে তা অপরাধ ৷ তবে এ ক্ষেত্রে মহিলাটি অপরাধী হবেন না ৷ কিন্তু পুরুষটিকে অপরাধ প্রমাণ হলে ৫ বছর পর্যন্ত হাজতবাস করতে হতে পারে ৷

১৫০ সালেরও পুরোনো এই আইন...

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এই আইনে পুরুষ এবং মহিলাদেরকে সমান চোখে দেখা হয় না ৷ তবে, কেউ অপরাধ করলে তার ক্ষেত্রে শাস্তি সমান হবে ৷ অর্থাৎ ধর্ষণ না হলে কোন বিবাহিত মহিলা তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক করলে তা ব্যাভিচার এবং শাস্তি সর্বোচ্চ সাত বছর অবধি হতে পারে ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার জরিমানাও হতে পারে ৷ তবে, এক্ষেত্রে ব্যাভিচারকে যদি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় ৷ সেক্ষেত্রে মহিলাদের কেন এই শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না ? এক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেই প্রশ্ন উঠছে ৷

তবে, প্রথম খসড়াতে এমন ছিল না ৷ ১৮৩৭ সালে লর্ড মেকলের নেতৃত্বে ভারতীয় দণ্ড সংহিতার প্রথম খসড়া তৈরি করা হয় ৷ সেখানে 'পরকীয়া' নিয়ে কোনও আইন ছিল না ৷ যদিও পরবর্তীকালে ১৮৪৭ সালে দ্বিতীয় রিপোর্ট তৈরি করা হয় ৷ সেই খসড়াতে পরবর্তীকালে লেখা হয়, 'ব্যাভিচারের অপরাধ ভারতীয় দণ্ড সংহিতার সঙ্গে আমরা যুক্ত করতে চাই না ৷ দেশের মহিলাদেরকে সম্মান করার জন্য এই অপরাধে পুরুষদেরকেই শুধুমাত্র অভিযুক্ত করা হবে ৷' পরবর্তীকালে ১৮৬০ সালে ৪৯৭ ধারা বলবৎ করা হয় ৷ যে আইনটি এখনও অবধি জারি রয়েছে ৷ ১৮৬০ সালের ৪৯৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি এমন কোনও মহিলার সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি ছাড়া শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হয় এবং ,সেটি যদি ধর্ষণের অপরাধ না হয়, তবে, সেই ব্যক্তি ব্যাভিচারের দায়ে দায়ী হবে ৷ যার শাস্তি সাত বছর পর্যন্ত যে কোনও মেয়াদের কারাদণ্ডসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে ৷ তবে, এক্ষেত্রে বিবাহিত মহিলার কোনওরকম শাস্তি হবে না ৷

এই আইন থেকেই উঠছে বেশ কিছু প্রশ্ন ৷
১. শারীরিক সম্পর্কে কি পুরুষরাই শুধু মহিলাদেরকে প্রলুব্ধ করে ?
২. মহিলারা কি ব্যাভিচার করতে অসমর্থ ?
৩. কোনও পুরুষদের যদি অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, তাহলে কি শুধুমাত্র পুরুষদেরকেই জেলে যেতে হবে ?
৪. যদি স্বামী তার স্ত্রীয়ের সঙ্গে অন্য সম্পর্কের জন্য সম্মতি দেয়, তাহলে কি এটা ন্যায়সঙ্গত হবে?

প্রসঙ্গত, এর আগেও ১৯৫৪, ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে আইপিসি ৪৯৭ ধারায় বদল আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের কাছে এসে বারবার সেটি আটকে গিয়েছে ৷ তবে, এই আইনে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট ৷ ধারায় বলা হচ্ছে, বিবাহিত মহিলা স্বামীর সম্মতি ছাড়াই কোনও পুরুষ ওই নারীর সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক করলে তা ব্যাভিচার হবে ৷ এখানেও উঠছে প্রশ্ন ৷ ওই মহিলার স্বামী সম্মতি দিলে সেটি কি কোনও অপরাধ হবে না ? ব্যাভিচার হওয়া কিংবা না হওয়া কি স্বামীর সম্মতি বা অসম্মতির বিষয় ?

প্রসঙ্গত, ১৫০ বছর আগে সমাজের পরিস্থিতি একেবারেই অন্যরকম ছিল ৷ দিনেকালে বদলেছে সমাজ ৷ তাই সমাজের এই আইনের বদল প্রয়োজন ৷