গঙ্গার নীচ দিয়ে মেট্রো, নকশা করেছিল ব্রিটিশ

জনসংখ্যার চাপে কলকাতা শহরে যানজট যে ভয়ঙ্কর আকার নেবে, ১০০ বছর আগেই তা জানিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারেরা। শুধু তা-ই নয়, বৃহত্তর কলকাতার সেই সমস্যা মেটাতে গঙ্গার ভিতর দিয়ে টিউব রেল নির্মাণের নকশাও তৈরি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। শতবর্ষ পরে সেই নকশার সন্ধান পেয়েছেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁরাই এখন সেই টিউব বা মেট্রো রেল তৈরির দায়িত্বে। সম্প্রতি পুরসভার মহাফেজখানা থেকে সেই নকশার কাগজ পেয়েছেন মেট্রোর বিশেষজ্ঞেরা।

১৯৪৭ সালের ৩ মে 'দ্য কলকাতা মিউনিসিপ্যাল গেজেট'-এ প্রকাশিত সেই নথিতে রয়েছে, ১৯১৯-'২০ সালেই টিউব রেল তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, বিট্রিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় বড় শহর হল কলকাতা। জনসংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষ। লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, লিভারপুলের মতো কলকাতার পাশেও রয়েছে নদী। যা কলকাতার আকর্ষণ অনেক বাড়িয়ে তুলেছে। গঙ্গার দু'পার জুড়ে দুই শহর কলকাতা এবং হাওড়া। যে হারে কলকাতায় জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে ওই শহরে বৃদ্ধি পাবে পরিবহণের চাপও। এ সব সামাল দিতে কলকাতা শহরে যানবাহন চলাচলের পরিসর আরও বাড়াতে হবে। সংযোগ বাড়াতে চাই রেল পরিষেবাও। বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের পরিধিও বাড়াতে হবে।

ওই গেজেট থেকে জানা গিয়েছে, সে সব ভেবেই ১৯১৯ সালে তৎকালীন প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির কাজ ছিল, কত সংখ্যক বাড়িঘর বাড়ছে, যানবাহন সমস্যাই বা কী— সে সব সমীক্ষা করা এবং তার প্রতিকারের উপায় বার করা। ওই কমিটিই ১৯২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করে। তাতে বলা হয়, শহর ও শহরতলির উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মজবুত করা প্রয়োজন। তাতে বিদ্যুৎচালিত রেলপথ বাড়ানো-সহ কলকাতার কেন্দ্রস্থলে একটি রেল স্টেশন তৈরির কথাও বলা হয়, যাতে শহরতলির মানুষ নানা প্রয়োজনে শহরের কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন। আর সেই যাতায়াতের জন্য কলকাতার সঙ্গে শহরতলির সরাসরি যোগাযোগের একটা ব্যবস্থা জরুরি বলেও জানানো হয়। সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট টিউব রেল তৈরির কথা। বলা হয়েছে, শিয়ালদহ থেকে ওই রেলপথ ডালহৌসি হয়ে গঙ্গার নীচ দিয়ে গিয়ে লিলুয়ায় শেষ হতে পারে।

বর্তমানে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডরের কাজে যুক্ত একাধিক ইঞ্জিনিয়ার জানান, ''খবরটা আমরা আগেই পেয়েছিলাম। ১০০ বছর আগের সেই নকশা এবং রিপোর্ট খোঁজার কাজ চলছিল। পরে খবর আসে, পুরসভার মহাফেজখানায় রয়েছে। নথিটি পাওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। দিন দু'য়েক আগে তা হাতে এসেছে। শতবর্ষের পুরনো সেই নকশা দেখা হচ্ছে।''