ফেসবুক-বন্ধুকে দেখতে ইউক্রেন থেকে আরামবাগ

আরামবাগ: কিয়েভ থেকে বিমানে দিল্লি। সেখান থেকে কলকাতা। তার পর আরামবাগের তালারপাড়। 'চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী।' স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে আলাপের সূত্রে ইউক্রেনের এক তরুণীর আরামবাগে আগমন নিয়ে এলাকায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আরামবাগের যে যুবকের সঙ্গে দেখা করতে ৩০ বছরের ওই তরুণী তিন মাসের ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছেন, সেই প্রসেনজিৎ কর্মকারের বিয়ে হয়েছে ১৫ অগস্ট।

পুলিশ জানায়, লোপা চুক নাদিয়া নামে ইউক্রেনের ওই তরুণী কিয়েভ থেকে দিল্লিতে পৌঁছন ২৩ অগস্ট। ২৫ তারিখ সন্ধ্যায় আরামবাগের একটি হোটেলে ওঠেন নাদিয়া। যিনি পেশায় নার্স।

মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী প্রসেনজিতের সঙ্গে বছর দেড়েক আগে ফেসবুকে পরিচয় নাদিয়ার। তার পর ফোনেও দু'জনে কথা বলতেন। দূরভাষে গলার স্বর শোনা, চ্যাটিং, হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিয়ো কল করা, সোশ্যাল মিডিয়ার মেসেঞ্জারে নিয়মিত কথাবার্তায় দু'জনের যোগাযোগ আরও নিবিড় হয়। এতটাই যে, তিন মাসের ভিসা নিয়ে প্রায় ছ'হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আরামবাগে চলে এসেছেন নাদিয়া। আর তার পরেই চাঞ্চল্য তল্লাট জুড়ে। এলাকার মানুষের অনেকের প্রশ্ন, প্রসেনজিতের বিয়ের খবর শুনেই কি উদ্বিগ্ন হয়ে এতটা পথ উজিয়ে এসেছেন ওই তরুণী?

নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি শুধু বলেন, 'প্রসেনজিৎ আমার বন্ধু। আমি ইন্ডিয়াকে ভালবাসি। তাই, আমি এসেছি।' প্রসেনজিৎ কর্মকারের কথায়, 'আমার সঙ্গে ওঁর (নাদিয়া) ফেসবুকে আলাপ। তিনি আমার বন্ধু। এর বেশি কিছু নয়। তিনি কেন এত দূর এসেছিন, সেটা তিনিই জানেন।' কিন্তু সে ক্ষেত্রে আরামবাগের ওই হোটেলে প্রসেনজিৎ পৌঁছলে দু'জনের মধ্যে ঝগড়া কেন শুরু হল? এই ব্যাপারে অবশ্য সদুত্তর মেলেনি। 

গত শনিবার, ২৫ অগস্ট সন্ধ্যায় নাদিয়া আরামবাগের একটি হোটেলে ওঠার পর প্রসেনজিৎ কর্মকারের খোঁজ শুরু করেন। ওই হোটেলেই তিন মাস থাকতে চান। এর পর হোটেলের ম্যানেজার প্রসেনজিতের হদিস পেয়ে তাঁকে সেখানে ডাকেন। প্রসেনজিৎ সেখানে পৌঁছলে দু'জনের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। তখন হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন।

ওই হোটেলের ম্যানেজার রাজু সামুই বলেন, 'ওই বিদেশিনী এখানে এসে তিনি তিন মাসের জন্য থাকতে চান। তাতে আমাদের সন্দেহ হয়। আমরা তাঁর ভাষা বুঝতে পারিনি। তবে স্মার্টফোনে গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে বুঝতে পেরেছি, তিনি কী বলছেন।' রাজুর দাবি, 'ওই বিদেশিনীর সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছি, এটা প্রেমেরই সম্পর্ক।' তবে তার পরেও এক রাত ওই তরুণী আরামবাগের হোটেলেই ছিলেন। মঙ্গলবার নাদিয়াকে আরামবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কৌতূহলবশত ভিড় জমান বহু মানুষ। তবে এ দিন দুপুরে প্রসেনজিতের সঙ্গেই নাদিয়া কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন। সম্ভবত কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার বিমান ধরবেন তিনি। আরামবাগের এসডিপিও কৃশানু রায় বলেন, 'বিদেশিনী কোনও অভিযোগ করেননি। স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে ওঁর ফেসবুকে আলাপ। তিনি জানিয়েছেন, ওঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। অন্য কিছু নয়।'