গুপ্তধন রহস্য। দুই নাবালিকাকে বলি দিলেই মিলবে গুপ্তধন !


ঘাটাল: গুপ্তধন রহস্য।

তাও সেই গুপ্তধনের মূল্য এক-দু'টাকা তো নয়। ৩৩ হাজার কোটি টাকা! তা পেতে মাত্র ১২ বছরের দুই বালিকাকে জীবন্ত কবর বা বলি দেওয়া এমন কী কঠিন কাজ? দু'টো সামান্য প্রাণের বিনিময়ে ৩৩ হাজার কোটির গুপ্তধন লাভ।

শেষপর্যন্ত অবশ্য সাত মন তেলও পোড়েনি। রাধাও নাচেনি। দুই কিশোরীর বলি হয়নি। তবে ধরাও পড়েনি গুপ্তধনের 'আবিষ্কারক'রা। পলাতক তান্ত্রিক ও তার দুই মৌলবি শাগরেদ। যারা মহাযজ্ঞের পর ১২ বছরের দুই কিশোরীকে বলি দিতে চেয়েছিল। কিংবা জ্যান্ত কবর। এবং হলফ করে শূন্যে হাত ঘুরিয়ে উপরওয়ালার নামে কসম খেয়ে বলেছিল, দুই প্রাণ শেষ হলেই ৩৩ হাজার কোটি হাতের মুঠোয়। তারপর বাড়ির মাটি খুঁড়লেই মিলবে গুপ্তধন। উঠে আসবে ঘড়া ঘড়া সোনা, দূর্মূল্য সব হীরে-জহরত। এক মুহূর্তে হওয়া যাবে বিপুল সম্পত্তির মালিক।

গুপ্তধন উদ্ধারের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ব্লকের পিয়ারডাঙা গ্রামের এক হতদরিদ্র কৃষককে এমনই লোভ দেখিয়েছিল এক তান্ত্রিক। তার তিন মৌলবি শাগরেদও জুটেছিল সেই কাজে। তান্ত্রিকের কথা মতোই হন্যে হয়ে ১২ বছরের বালিকাদের অপহরণ করার চেষ্টা করছিল তারা। কিন্তু সব ছকই গেল ভেস্তে।

তান্ত্রিক ও শাগরেদের কথামতো শুক্রবার হক্সেন বাড়ির সামনে জঙ্গলে ম্যারাপ বেঁধে চলছিল যজ্ঞ। তবে শেষমেশ প্রতারকদের বুজরুকি ধোপে টেকেনি। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে খোদ বিডিও গিয়ে ওই যজ্ঞ বন্ধ করেন। বিডিও আসার খবর পেয়েই চার প্রতারক চম্পট দেয়। বাড়ির মালিক হক্সেনও তাঁর পরিবারসমেত গ্রামছাড়া হয়েছেন। শুক্রবার সকালে পিয়ারডাঙা গ্রামে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত তান্ত্রিক অমর জানা ও তার তিন শাগরেদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

গত কয়েকদিন ধরেই হক্সেন ভাঙির ভিটে খোঁড়ার কাজ চলছিল। সেই সঙ্গে জঙ্গলঘেরা বাড়ির একপ্রান্তে একটি অশ্বত্থ গাছের তলায় ম্যারাপ বেঁধে খানিক গোপনেই চলছিল যাগযজ্ঞ। এদিন সকালে অভিযুক্ত তান্ত্রিক অমর জানা ও তিন মৌলবির চালানো সেই যজ্ঞের সামনে মুখ কাঁচুমাচু করে হাজির ছিলেন বাড়ির মালিক হক্সেন ভাঙি। কারণ, তান্ত্রিকের কথামতো বলি ও কবরের জন্য দু'টি বারো বছরের মেয়েকে হাজির করতে পারেননি তিনি। সেই অপরাধেই হক্সেনকে অভিযুক্ত তান্ত্রিক বকাবকি করছিল। এরপরেই ঘটনাস্থলে বিডিও চলে এলে যজ্ঞ ভেস্তে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হক্সেনের বাড়ির জমি খোঁড়াখুঁড়ি ও তান্ত্রিক, মৌলবিদের নিয়ে যাগযজ্ঞ দেখে প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল বাসিন্দাদের। সেইসঙ্গে গুপ্তধনের কথা গোটা গ্রামে চাউর হতেই সেই খবর পৌঁছয় প্রশাসনের কাছে।

চন্দ্রকোনা ব্লকের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, "আমাদের কাছে যজ্ঞ করে দুই কিশোরীকে বলি ও কবর দেওয়ার মতো ঘৃণ্য ঘটনার খবর ছিল। সেইমতো আজ সকালে পিয়ারডাঙা গ্রামে হক্সেন ভাঙির বাড়ি গিয়ে ওই যজ্ঞ ভেস্তে দিই। কিন্তু প্রশাসনের আসার খবর পেয়েই প্রতারকরা পালিয়ে গিয়েছে। তবে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও থানাকে ওই এলাকায় নজরদারি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সেইসঙ্গে বাড়ির মালিকের খোঁজও চলছে। এই ধরনের বুজরুকির ঘটনা ঠেকাতে তৎপর রয়েছে প্রশাসন।"

Highlights
শুক্রবার সকালে পিয়ারডাঙা গ্রামে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে।
গ্রামবাসীদের কাছ থেকে খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে খোদ বিডিও গিয়ে ওই যজ্ঞ বন্ধ করেন।
বিডিও আসার খবর পেয়েই চার প্রতারক চম্পট দেয়।