হিন্দু হস্টেলে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ঘেরাও প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের


কলকাতা: বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের৷ ফের আন্দোলন শুরু করল প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা৷ এবারের দাবি, হস্টেল৷ অবিলম্বে ইডেন হিন্দু হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ডিনদের ঘেরাও করে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করলেন পড়ুয়ারা৷

শুক্রবার দুপুর ৩টে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ আর্টস, ডিন অফ সায়েন্স, ডিন অফ স্টুডেন্টস এবং ডেভলোপমেন্ট অফিসারকে আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা৷ তাঁদের দাবি, অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হিন্দু হস্টেল ফিরিয়ে দিতে হবে৷

সংস্কারের জন্য ২০১৫ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ইডেন হিন্দু হস্টেল খালি করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ তারপর কেটে গিয়েছে তিন বছর৷ গত বছর লিখিতভাবে পড়ুয়াদের এই বছরের ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া৷ কিন্তু, চলতি কথায় রয়েছে 'প্রমিস করা হয় ব্রেক করার জন্যই'৷ সেই চলতি কথাকে সার্থক করে ১৫ জুলাই পার হয়ে গেলেও হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়া তো দূরস্থান৷ এখনও পর্যন্ত সংস্কারের কাজই শেষ করতে পারল না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷

উল্টে, সময়ের মধ্যে সংস্কারের কাজ করতে না পারার ব্যাখ্যা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন অনুরাধা লোহিয়া৷ এই বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাখ্যার পাশাপাশি হিন্দু হস্টেলের সংস্কারের কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটিও গঠন করার কথা বলা হয়েছে৷

আশ্চর্যজনকভাবে এই কমিটিতে এক বা দু'জন নয়, একেবারে ছয়জন পড়ুয়াকে রাখার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু, ব্যাখ্যা ও কমিটিতে মানতে নারাজ প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা৷ স্টুডেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য কমিটির সদস্য শুভজিৎ সরকার বলেন, ''আমাদের দাবি, হিন্দু হস্টেলের প্রায় ৬০ জন আবাসিক বর্তমানে নিউটাউনের হস্টেলে রয়েছেন৷ হিন্দু হস্টেলে যতদূর কাজ হয়েছে তাতে ১০০ জন আবাসিক রাখা যাবে৷ অবিলম্বে সেই জায়গায় যে সব পড়ুয়ারা রাজারহাট নিউটাউনের হস্টেলে থাকছেন তাঁদেরকে হিন্দু হস্টেলে জায়গা দিতে হবে৷ পাশাপাশি, তাড়াতাড়ি সংস্কারের কাজ শেষ করতে হবে৷''

শুভজিৎ সরকারের বক্তব্য, ''উপাচার্য আমাদের বলেছিলেন ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে হিন্দু হস্টেল ফেরত পেয়ে যাবে৷ সেই ১৫ জুলাই পেরিয়ে আজ অগস্টের ৩ তারিখ৷ তাই অবিলম্বে হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আমরা অবস্থান বিক্ষোভে বসেছি৷'' শুভজিৎ জানাচ্ছেন, দাবি না মানা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তাঁরা৷

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য জানিয়েছেন, ''ইডেন হিন্দু হস্টেলে বর্তমানে সংস্কারের কাজ চলছে৷ ২০১৬ সালে এই ১৩২ বছর বয়সী হস্টেলের সংস্কারের কাজ শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, যা ভাবা হয়েছিল তার তুলনায় আরও অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই হস্টেলটি৷ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কনস্যালটেন্ট আর্কিটেক্টের পরামর্শ অনুযায়ী রাজ্য সরকারের কাছে সংশোধিত বাজেট পেশ করি৷ ইতিমধ্যেই বর্তমান সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আগে যে সংস্থা সরকারের কাজ করছিল তাদের বদল করে পূর্ত দফতরের হাতে সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷''

এই ব্যাখ্যার পরেও প্রশ্ন উঠে, তিন বছর তো হয়ে গেল, আর কতদিন? এই প্রশ্নের উত্তরও বিজ্ঞপ্তিতে পাওয়া গিয়েছে৷ বলা হয়েছে, ''পূর্ত দফতর থেকে জানানো হয়েছে, হিন্দু হস্টেলকে ছাত্রদের জন্য সুরক্ষিত করতে কাজ শুরুর পর তা শেষ করতে চার থেকে পাঁচ মাসের মতো সময় লাগবে৷'' কিন্তু, এই সময় দিতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা৷

তাঁদের মতে, ইতিমধ্যেই উপাচার্যের দেওয়া সময় পার হয়ে গিয়েছে৷ বর্তমানে হস্টেলের অবস্থা অনুযায়ী, যাঁরা রাজারহাটের হস্টেলে থাকছেন তাঁদেরকে হিন্দু হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি৷