নদীয়ায় অবৈধ সম্পর্কের জেরে সুপারি কিলার দিয়ে খুন ব্যবসায়ীকে ।

মোবাইলের কললিস্ট দেখেই গ্রেপ্তার মহিলা


বারাকপুর: বার বার টাকা ধার দেওয়ার জন্য চাকদহের মুদি ব্যবসায়ী নিমাই সাধুখাঁর সঙ্গে এক মহিলার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ধার দেওয়ার পরিমাণ বেড়ে পাঁচ-ছয় লক্ষ টাকা হয়ে যায়। সম্পর্ককে সামনে রেখে ওই মহিলা টাকা ফেরত দেবে না বুঝতে পেরেই ওই ব্যবসায়ী টাকা ফেরত দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করে। আর তাতেই ওই মহিলা ঠান্ডা মাথায় সুপারি কিলার দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে খুন করে বলে অভিযোগ। নিমাইবাবুর মোবাইলের কললিস্ট দেখেই চায়না ঘোষ নামে ওই মহিলা ইতিমধ্যেই পুলিসের জালে ধরা পড়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই খুনের ঘটনায় আরও কয়েকজনকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে।

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পেরেছে, ওই মহিলা দেখা করার টোপ দিয়ে ফোন করে ওই ব্যবসায়ীকে চাকদহের ফেরিঘাটে ডেকে পাঠিয়েছিল। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ফেরিঘাটে তাঁকে বসিয়ে রেখেছিল। ঘটনার দিন বিকাল থেকে ওই ব্যবসায়ী খুন হওয়ার আগে পর্যন্ত ১৫ বারের বেশি ওই মহিলা তাঁর মোবাইলে ফোন করেছিল। পরে, পূর্ব পরিকল্পনা মতো সুপারি কিলার পাঠিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। 
পুলিস জানিয়েছে, মুদি ব্যবসায়ী নিমাইবাবু সুদের কারবারও করতেন। বছর চল্লিশের চায়না ঘোষ নামে ওই মহিলাকে কয়েক দফায় সুদে টাকা ধার দিয়েছিলেন। মহিলার সঙ্গে একাধিক পুরুষের সম্পর্ক রয়েছে। টাকা ধার দেওয়ার সূত্র ধরেই নিমাইবাবুর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ওই মহিলার আশা ছিল, সম্পর্কের খাতিরে ওই ব্যবসায়ী তার বকেয়া টাকা মকুব করে দেবে। কিন্তু, নিমাইবাবু টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। তাতেই ওই মহিলা রেগে যায়। এরপরই ওই ব্যবসায়ীকে খতম করার সে ছক কষে। পরে, শিকারপুরে শাহরুখ মিস্ত্রি নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। খুন করার বিনিময়ে অল্প বয়স্ক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক এবং এক লক্ষ টাকার টোপ দেওয়া হয় শাহরুখকে। তাতে শাহরুখ রাজিও হয়ে যায়। আর শাহরুখের বাড়ি ওই এলাকাতে হওয়ায় দুজনেই দুজনকে চিনত।

খুন হওয়ার দিন পনেরো আগে শাহরুখকে নিয়ে চায়না গোটা ছক কষে। পরিকল্পনা মতো কালীপুর ফেরিঘাটকে তারা বেছে নেয়। কারণ, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর ওই ফেরিঘাট নির্জন হয়ে পড়ে। আর ফেরিঘাটে নিমাইকে ডেকে এনে বসিয়ে রাখার সব দায়িত্ব চায়না নিজের উপর নেয়। গত ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার ওই ব্যবসায়ী বিকালে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যান। পরে, ফেরিঘাটে তাঁকে দেখা যায়।

স্থানীয় লোকজন পুলিসকে জানিয়েছেন, সন্ধ্যার দিকে তিনি গঙ্গার ওপারে হুগলির খামারগাছি গিয়েছিলেন। শেষ ফেরিঘাটে তিনি ফিরে আসেন। সাড়ে সাতটা নাগাদ ফেরিঘাট বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও তিনি বাইক নিয়ে ফেরিঘাটেই বসেছিলেন। পূর্ব পরিকল্পনা মতো চায়না ফোন করে তাঁকে দেখা করার টোপ দিয়ে ফেরিঘাটে বসিয়ে রাখে। রাত আটটার পর ফেরিঘাট একেবারে নির্জন হয়ে গেলেই শাহরুখ সহ তিনজন বাইক নিয়ে সেখানে হাজির হয়। শাহরুখ পরিচিত হওয়ায় নিমাইবাবু কোনও সন্দেহ করেননি। কিন্তু, কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রথমে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তাতে তিনি বাইক থেকে নীচে পড়ে যান। শ্বাসরোধ করে গলার নলি কেটে খুন করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, ওই মহিলা শাহরুখকে ফোন করে ওই ব্যবসায়ী খুন হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়। এক লক্ষ টাকা দেওয়ার যে কথা সে বলেছিল তাও দেয়নি। তার আগেই সকলকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।