পাওনাদারের পানীয়ে ‘বিষ’, গ্রেপ্তার গৃহবধূ


গিয়েছিলেন পাওনা টাকা আনতে। কপালে জুটল 'বিষ।' উপরি পাওনা কুকুরের তাড়া। ওঁরা দু'জন চিমনি প্রস্তুতকারী সংস্থার আধিকারিক। শুক্রবার বিকেলে গিয়েছিলেন টাকা আদায় করতে। তখন তাঁদের খাতিরযত্ন করে ঠান্ডা পানীয় খেতে দেওয়া হয়। তাতেই মেশানো ছিল অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো কিছু কড়া ওষুধ। একজন সেই পানীয় খেয়ে ঝিমিয়ে পড়েন। অন্যজন বেগতিক বুঝে অফিসে ফোন করার চেষ্টা করলে লেলিয়ে দেওয়া ক্রুদ্ধ কুকুর। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে দুই আধিকারিককে উদ্ধার করে। যে-মহিলা এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন তাঁর নাম মধুমন্তী সাহা। তাঁকে শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। তাঁকে তিন দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। 

চিমনি বা ওয়াটার-ফিল্টার বা কোনও ভোগ্যপণ্য সংস্থার কর্মী পরিচয়ে বাড়ি ঢুকে সর্বস্ব লুঠপাটের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু গৃহকর্ত্রী তাঁদের বিষ মিশিয়ে অচৈতন্য করার চেষ্টা করছেন, এটা অভিনব। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সংস্থার এক আধিকারিক এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডিসি (সাউথ) মিরাজ খালিদ জানিয়েছেন, শুধু পাওনা টাকা না-মেটানোর অছিলায় এমন কাণ্ড, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

পুলিশ সূত্রের খবর, নিউ আলিপুরের পি ব্লকের একটি বহুতলে মা ও মেয়েকে নিয়ে মাস কয়েক ধরে ভাড়ায় রয়েছেন মধুমন্তী। একটি বৈদ্যুতিন চিমনি প্রস্তুতকারক সংস্থার কাছ থেকে তিনি দু'টি সামগ্রী কিনেছিলেন তিনি। তার জন্য দাম বাবদ ৩৯ হাজার টাকা মিটিয়েছিলেন চেকে। চিমনি প্রস্তুতকার সংস্থার দাবি, সেই চেকটি বাউন্স করে। এর পর সংস্থার তরফে থেকে ফোন যায় মধুমন্তীর কাছে। তিনি সংস্থার আধিকারিকদের জানান, নগদে তিনি ওই টাকা মিটিয়ে দেবেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই শুক্রবার দুপুরে সংস্থার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার অমিত চক্রবর্তী ও অন্য আধিকারিক সোমনাথ মণ্ডল নিউ আলিপুরের বাড়িতে যান। বাড়িতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন মহিলা। কিছু খাবারদাবার ও ঠান্ডা পানীয় দিয়ে তাঁদের আপ্যায়নও করেন মহিলা। অভিযোগ, ওই পানীয়ে চুমুক দিয়েই অচৈতন্য হয়ে পড়েন অমিত। তাতে আতঙ্কিত হয়ে প্রথমে সংস্থার কর্তাদের ফোন করতে যান সোমনাথ। তখন মধুমন্তী তাঁর ফোন কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। কুকুরও লেলিয়ে দেওয়া হয়। অমিতকে ওই অবস্থায় ফেলেই কোনওরকমে ঘর থেকে পালিয়ে আসেন সোমনাথ। তিনি সরাসরি চলে যান নিউ আলিপুর থানায়। পুলিশ এসে ঘর থেকে উদ্ধার করে অমিতকে। কোনওক্রমে পাঁজাকোলা করে নামিয়ে অমিতকে নিউ আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশের দাবি, হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, বিষ জাতীয় কিছুর প্রভাবেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অমিত। পুলিশ জানিয়েছে, মধুমন্তীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৮ ধারায় (আহত করার উদ্দেশ্যে মাদক জাতীয় কিছু প্রয়োগ করা) মামলা রুজু করা হয়েছে। এই ধারাটি জামিন অযোগ্য। 
মধুমন্তীর মেয়ে অবশ্য এ দিন বলেন, 'কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।' তিনি আরও জানান, তাঁরা একমাস আগে একটি চেক দিয়েছিলেন। সেটা কোনও কারণে সংস্থার কর্মীরা ভাঙাতে পারেননি। তাই শুক্রবার দুপুরে সংস্থার কর্মীরা তাদের বাড়ি এসেছিলেন। প্রথমে ৩৯ হাজার টাকার চেক দিলেও সংস্থার আধিকারিকরা জানান, আরও আট হাজার টাকা এবং জিএসটি বাবদ আরও হাজার দুয়েক টাকা দিতে হবে। সে টাকা দেওয়ার জন্য তাঁদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। তার পর তাঁর মা মিষ্টি ও ঠান্ডা পানীয় দেন। একজন সেটা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে ওঁরা অভিযোগ করেছেন। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মহিলা স্বীকার করেছেন তিনি ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে একটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলেন। শুধু ওই চিমনি প্রস্তুতকারক সংস্থাই নয়, আরও বেশ কিছু দোকানদার তাঁদের কাছ থেকে টাকা পান বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। এ দিন ওই আবাসনের নীচে একটি আসবাব বিক্রির দোকানদারও এসেছিলেন। তবে তাঁরা সত্যিই কত টাকা পান বা আদৌ পান কি না, সেটাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।