জমা জলে মশার লার্ভা মিললেই লাখ টাকা জরিমানা!


এত দিন সচেতনতায় জোর দেওয়া হয়েছে। তবে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন এবার শক্ত হতে চলেছে। জমা জলে মশার লার্ভা মিললেই হতে পারে একশো থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। শনিবার বাঁকুড়ায় স্বাস্থ্য দফতর এবং জেলার বিডিওদের নিয়ে বৈঠকে এই কথা জানিয়ে দিয়েছেন জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জনস্বার্থে ক্ষতিকর হতে পারে এমন কিছু করলে বিডিও, মহকুমাশাসক বা জেলাশাসকেরা সিআরপিসি-র ১৩৩ ধারা প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। সেই আইনকেই ডেঙ্গি মশার লার্ভা নিধনে কাজে লাগাতে চাইছে জেলা প্রশাসন।

এ দিন জেলাশাসক বলেন, "ডেঙ্গির মশা ডিম পাড়ে পরিষ্কার জমা জলে। সেই মশার কামড়ে মানুষ অসুস্থ হয়। জীবনহানিও হতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩৩ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়াই যায়। এ বার সেটাই আমরা করব।"

জেলাশাসক জানান, সরকারি অফিস, হাসপাতাল, পুরসভা, গ্রামপঞ্চায়েত, কারখানা, ব্যক্তিগত বাড়ি বা জমির মালিক— সবার বিরুদ্ধেই ওই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিন বৈঠকে তিনি বলেন, "গ্রাম ও শহরাঞ্চলে পরিদর্শকেরা এলাকায় এলাকায় ঘুরে মশার লার্ভা রয়েছে কি না দেখছেন। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

তিনি জানান, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পুকুর দীর্ঘ দিন সংস্কার না করা হলে বা পুকুরে ডেঙ্গি মশার লার্ভা মিললে জেলা প্রশাসন 'ইনল্যান্ড ফিসারিজ অ্যাক্ট ১৯৮৪' অনুসারে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সেটি পরিষ্কার করে লিজে দিয়ে মাছ চাষ করাতে পারে। সংস্কারের অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে নোংরা হয়ে থাকা এমন পুকুরগুলির ক্ষেত্রে সেই আইনও প্রয়োগ করা হবে।

বাঁকুড়া পুরসভার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, "এই শহর পরিকল্পনা মাফিক গড়ে ওঠেনি। তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করেও শহরের সব এলাকা থেকে জল বের করে দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তার পরেও যদি আমাদের কোনও গাফিলতি প্রশাসনের নজরে আসে, তা হলে নিশ্চয় শুধরে নেব। আমরা এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছি।"

বড়জোড়ার হাট আশুড়িয়া এলাকায় করোগেটেড বাক্স তৈরির কারখানা রয়েছে প্রবীর সরকারের। তাঁর মতে, ডেঙ্গি রুখতে প্রশাসনের এই উদ্যোগ ভাল। তবে জরিমানা করার পাশাপাশি এলাকায় নিয়মিত অভিযানের ব্যাপারে যাতে জোর দেওয়া হয়, সেই দাবি তুলেছেন তিনি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ অগস্ট পর্যন্ত জেলায় মোট ১৭ জন ডেঙ্গি রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূণকুমার দাস বলেন, "পরিদর্শনে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গির মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। সচেতনতার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলে মানুষ অনেক বেশি সতর্ক হবেন বলেই মনে করছি।"

বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) নবকুমার বর্মন জানিয়েছেন, আগামী সাত দিন জেলা জুড়ে প্রচার করা হবে। এক লক্ষ হ্যান্ডবিল ছাপানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরকে। তিনি বলেন, ''প্রচারের কাজ শেষ হওয়ার পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে।''