ঘুষ নেওয়া আটকাতে করদাতাদের সঙ্গে অফিসারদের মুখোমুখি বসার রাস্তা প্রায় বন্ধ করল ইনকাম ট্যাক্স


কলকাতা: আয়কর সংক্রান্ত কোনও জবাবদিহি চাইতে কোনও করদাতাকে নিজের অফিসে আর ডেকে পাঠাতে পারবেন না ইনকাম ট্যাক্স অফিসাররা। আয়কর দপ্তর থেকে এই বিষয়ে নোটিস জারি করা হয়েছে গত ২০ আগস্ট। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের কর ধার্য করার সময় অফিসাররা শুধুমাত্র ই-প্রসেসিং পদ্ধতিতেই কর নির্ধারণ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে যদি করদাতাকে কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে হয়, তাহলে তিনিও তা করবেন একমাত্র ই-ফাইলিং পোর্টালের মাধ্যমেই। অর্থাৎ সরাসরি আয়করদাতাকে সশরীরে হাজির হতে বাধ্য করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, করদাতাকে ডেকে, ধমক-চমক দিয়ে বা বিপাকে ফেলে উৎকোচ আদায় বন্ধ করতেই এই নিয়ম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে অবশ্য এই নিয়মের শিথিলতাও রয়েছে। 
সাধারণ মানুষ যাতে আয়করে ভয় না পান, তার জন্য নানাভাবে প্রচার করছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টকে শুধু টাকা আদায়ের যন্ত্র হিসেবে না দেখিয়ে, তাকে পরিষেবাপ্রদানকারী সংস্থা হিসেবেই তুলে ধরতে চেয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু বাস্তবে তা যে আদৌ হয়নি, তা নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্তারাই। কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ইনকাম ট্যাক্স অফিসারদের সঙ্গে করদাতাদের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে লাগাম টানলেই, খানিকটা কাজ হবে। বন্ধ হতে পারে উৎকোচ আদায়ের রাস্তাও। সেক্ষেত্রে 'ঘুষখোর' দপ্তর হিসেবে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের বদনামও ঘুচতে পারে।

করদাতারা এখন তাঁদের আয়কর রিটার্ন জমা দেন ই-ফাইলিং পোর্টালের মাধ্যমে। ২০১৭ সালে দপ্তর নিজে একটি পোর্টাল বানায়, যার নাম দেওয়া হয় ইনকাম ট্যাক্স বিজনেস অ্যাপ্লিকেশন। তার সঙ্গে যুক্ত করা হয় ই-ফাইলিং পোর্টাল। করদাতাদের সঙ্গে অফিসারদের যোগাযোগ করার মাধ্যম হয়ে ওঠে ওই ই-ফাইলিং পোর্টাল। কিন্তু সেখানে সব কারদাতাকেই তথ্য আদানপ্রদানের জন্য ওই পোর্টালের সাহায্য নিতে হবে, এমনটা বাধ্যতামূলক করেনি আয়কর দপ্তর। করদাতার কাছে তা ছিল ঐচ্ছিক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আয়কর দপ্তর জানায়, ওই ই-পোর্টালকেই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরতে পরিকাঠামো সাজাচ্ছে তারা।

এবার দপ্তর নোটিস জারি করে বলেছে, কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণ সব ক্ষেত্রেই ই-প্রসেসিং পরিষেবার মাধ্যমে কর নির্ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেখানে যদি ইনকাম ট্যাক্স গরমিল সংক্রান্ত কোনও কেসে করদাতাকে আয়করকর্তা নোটিস পাঠান, তাহলে তার জবাব তিনি পোর্টালের মাধ্যমেই নেবেন। তারপরও যদি আরও কিছু জানার থাকে সংশ্লিষ্ট আয়করকর্তার, তাহলে তিনি ফের সেই পোর্টালেরই দ্বারস্থ হবেন। জবাবও দিতে হবে সেখানেই। অর্থাৎ যতক্ষণ না বিষয়টি আদালত বা ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত গড়াচ্ছে, ততক্ষণ আয়কর আদায়ের ৪৩ (৩) ধারায় কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে অফিসারদের তরফে করদাতাদের মুখোমুখি হওয়া বন্ধ। যদি কোনও করদাতার ই-পোর্টালে অ্যাকাউন্ট না থাকে অথবা যদি তাঁর প্যান কার্ড না থাকে, সেসব ক্ষেত্রে অবশ্য এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

কিন্তু এই নিয়মে কি উৎকোচ বা ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা কমবে? সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, সেখানে কিছুটা লাগাম তো টানা যাবেই। তবে আইনের আরও ফাঁকফোঁকরে সবটুকু স্বচ্ছ নাও হতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয়কর ভীতি যে খানিকটা কমবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত অনেকেই। দপ্তরের কর্তাদেরই একাংশ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন বছরে একবার আয়কর দপ্তরের উপর মহলের অফিসারদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখানে নাকি তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, এই দপ্তর আদতেই দুর্নীতির আখড়া। সেই দপ্তরকেই স্বচ্ছ হতে সাফসুতরোর প্রয়োজন।

আয়করদাতাদের সঙ্গে ইনকাম ট্যাক্স অফিসারদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ করা তেমনই একটি উদ্যোগ, বলছেন তাঁরা।