গুলি খেলে তিন ছাত্রকে স্কুলে ফেরালেন প্রধান শিক্ষক


গুলির হাতছানিতে ওরা স্কুল ছেড়েছিল। সেই গুলিই আবার ওদের ফিরিয়ে আনল স্কুলে।

মুর্শিদাবাদের ট্যাংরামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির তিন ছাত্র এখন নিয়মিত স্কুলে আসছে। টিফিনে স্কুলের মাঠে গুলিও খেলছে। উপরিপাওনা নতুন এক সঙ্গী— স্কুলের প্রধানশিক্ষক!

হাতের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে প্রধানশিক্ষক অসীমকুমার অধিকারী হাসছেন, ''টিফিনে ওদের একটু সঙ্গ দিচ্ছি। নইলে আবার পালাবে যে!'' আর চতুর্থ শ্রেণির ইকবাল,  নাজিরুল আর মফিজুল বলছে, ''স্কুলে গুলি খেলতে পারছি। আর পালাব না।''

হরিহরপাড়ার ট্যাংরামারিতেই বাড়ি ওই তিন পড়ুয়ার। প্রায় দিনই স্কুলের বইপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোত। কিন্তু স্কুল পর্যন্ত আর পৌঁছত না। স্কুলের পথে বাঁশবাগান, নির্জন মাঠ কিংবা কোনও আমবাগানে চলত গুলি-চর্চা। রংবেরঙের সেই গুলিই তাদের ধ্যান-জ্ঞান। দূর থেকে কোনও শিক্ষককে আসতে দেখলেই সটান উঠে পড়ত গাছের মগডালে। ভয় একটাই, শিক্ষক যদি ফের স্কুলে ধরে নিয়ে যান!

কিছু দিন ধরেই চতুর্থ শ্রেণির ওই তিন পড়ুয়ার গুলি-প্রীতি লক্ষ করেন অসীমবাবু। তার পরেই এক দিন স্কুলের পথে চুপিসাড়ে ওই তিন জনকে ধরে ফেলেন। মারধর নয়, বকুনিও নয়। মিঠে গলায় প্রস্তাব দেন, ''কই, একটা গুলি দে তো। আজ তোদের সঙ্গে এক দান খেলেই স্কুলে যাব।''

প্রথমে কথাটা বিশ্বাস হয়নি ইকবালদের। তারা ভেবেছিল, এ সবই আসলে বাহানা। এর পরেই শুরু হবে মারধর। কিন্তু নাঃ। 'হেডমাস্টার' গুলি খেলে তাক লাগিয়ে দেন খুদে তিন পড়ুয়াকে। তার পরেই ছুড়ে দেন মোক্ষম অস্ত্র, ''তোরা যদি স্কুলে আসিস, টিফিনে কিংবা স্কুল ছুটির পরে গুলি খেলব। দেখব, তোরা আমাকে হারাতে পারিস কি না!''

ওষুধে কাজ হয়। দিন সাতেক আগে গুটিগুটি পায়ে স্কুলে আসে তিনমূর্তি। পিঠে বইয়ের ব্যাগ। পকেটে গুলি। অসীমবাবু তাদের দেখেই জানতে
চান, ''কী রে, গুলি এনেছিস তো? টিফিনে আমায় ডাকবি কিন্তু।'' বেজায় খুশি হয়ে তিন পড়ুয়া চলে যায় ক্লাসে।

স্কুলছুটদের ফিরিয়ে আনতে নানা রকম উদ্যোগ চোখে পড়েছে। কিন্তু কোনও প্রধানশিক্ষক গুলি খেলছেন, এমন দৃশ্য নবাবের জেলা আগে কখনও দেখেনি। মুর্শিদাবাদের জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) নীহারকান্তি ভট্টাচার্য বলছেন, ''শিক্ষকদের এ ভাবেই তো ছাত্রদের সঙ্গে বন্ধুদের মতো মেশা উচিত। অসীমবাবু একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন।''

অসীমবাবু বলেন, ''ওদের সঙ্গ ছেলেবেলার কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে।''

আর তিনমূর্তির কথায়, ''জানো তো, হেডমাস্টারের হাতেও বিরাট টিপ!''