পশ্চিমবঙ্গে ৩ কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী!


অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে ৪০ লক্ষ নাম বাদ পড়ার পরই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। সেই বিতর্ক এখন কার্যত রূপ নিয়েছে অসম বনাম পশ্চিমবঙ্গ সংঘাতে। আরও স্পষ্ট করে বললে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ এনআরসি নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই উঠে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি-র দাবি। আর সেই দাবিকে আরও শক্তিশালী করল গোয়েন্দা সংস্থা র'য়ের প্রাক্তন সচিবের একটি মন্তব্য।

র'য়ের প্রাক্তন সচিব অমর ভূষণের কথায়, পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে আরও বড় সমস্যা রয়েছে। অসমে প্রথম এই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সবার আগে এনআরসি হওয়া উচিত ছিল পশ্চিমবঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের একটি ধারণাই ছিল যে, বাংলায় তিন কোটি অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন। এই ৩ কোটির মধ্যে ১.২ কোটি লোক দেশের অন্যত্র চলে গিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি মনে করি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের অনুপ্রবেশ রুখতে আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিল। আমরা যদি আগে থেকে কঠোর হতে পারতাম, তাহলে আমাদের এই অবস্থায় পৌঁছতে হত না। সিপিএম আমল থেকে অনুপ্রবেশ সমস্যা প্রকট হতে শুরু করে। বাম সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তারপর তৃণমূল কংগ্রেস সরকারও এই সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়নি।

বর্তমানে অসমের এনআরসি বিতর্কে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভোটের লক্ষ্যেই এই এনআরসি। এই এনআরসিতে বেছে বেছে নাম-পদবি দেখে লোকের নাম বাদ পড়েছে। রাতারাতি এদেশের বাসিন্দারা নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। যারা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এদেশে বসবাস করছেন তাঁদের নামও বাদ গিয়েছে নাগরিকত্বের তালিকায়।

রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের প্রাক্তন বিশেষ সচিব অমর ভূষণের লেখা একটি বই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সেই 'দ্য জিরো কস্ট মিশন/দি উইলি এজেন্ট' বইটিতেই পূর্ব পাকিস্তান তৈরির কথা বলা হয়েছে। ১৯৯২-৯৩ সালে বাংলাদেশে অপারেশনের কথা বর্ণিত হয়েছে তাঁর বইতে। রয়েছে জামায়াত-ই-ইসলামীর লক্ষ্যের কথা। এই অপারেশন মূলত একটি বৃহত্তর পূর্ব পাকিস্তান তৈরির অভিপ্রায় বলেই বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দিয়েই বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়েছিল বলেই 'র'-এর ধারণা।

যাইহোক, প্রাক্তন 'র' অফিসার স্পষ্ট করে দেন যে, বর্তমানে বিরোধীরা যে প্রসঙ্গে তুলে এনআরসি-র বিরোধিতা করছে, মানবাধিকারের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। এতে একটাই উদ্বেগ শুধু ধরা পড়ছে, এই সমস্ত মানুষ অবৈধ ভোটের অধিকার হারালে কী হবে! কে সুবিধা পাবে, কে পাবে না সেই প্রশ্নেই এনআরসি-র দাবি ওঠা-পড়া করছে। কিন্তু বেআইনি অনুপ্রবেশ রোখার ব্যাপারে সদর্থক কোনও ভূমিকা নেওয়া হয়নি।

অমর ভূষণ বলেন, প্রতি ভারতীয় নাগরিকেরই পরিষেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু যাঁরা ভারতীয় নাগরিকই নন, তাঁরা কী করে পরিষেবা দাবি করে। কে বৈধ, কে বৈধ নয় তা বিবেচনা পরে। কিন্তু বিজেপি এনআরসি করে যে সাহস দেখিয়েছে, তা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য।

তিনি বলেন আমি মনে করি যে, যাঁরা নাগরিকত্ব নেই, অথচ অবৈধভাবে এ দেশে রয়েছেন তাঁদের সমস্ত সরকারি সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এমনকী তাঁদের ভোটের অধিকারও কেড়ে নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, বিরোধীদের প্রধান সমস্যা নয় তারা চাকরি পেলেন কি না, তাঁদের রেশন কার্ড হল কি না, তাঁদের শিক্ষার কী হাল। আসল প্রশ্ন হল- তাঁদের ভোটাধিকার।