এক কিলোমিটারেই বছরে ১৪ লক্ষ!

খন্দময়: বেহাল ই এম বাইপাস দিয়ে এ ভাবেই চলছে নিত্য যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র
কলকাতায় রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার। বাজেট অনুযায়ী ওই পরিমাণ রাস্তার জন্য প্রতি বছর খরচ হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তার উপরে রয়েছে রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তা। যার অঙ্কটাও কমপক্ষে ৬০-৭০ কোটি টাকা। পুরসভার এক অফিসারের কথায়, ''সমস্ত হিসেব ধরলে প্রতি বছর শুধুমাত্র রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই খরচের পরিমাণ ২৫০ কোটির বেশি। অর্থাৎ, এক কিলোমিটার রাস্তার জন্য প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। একই রাস্তার জন্য বছর বছর ওই টাকা খরচ কেন হবে, এ বার তা নিয়েই প্রশ্ন উঠল পুর মহলে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত পুর প্রশাসনও। একাধিক পুরকর্তার প্রশ্ন, এত খরচের পরেও কেন শহরের রাস্তায় খানাখন্দ তৈরি হচ্ছে?

দিন কয়েক আগে শহরের রাস্তার হাল নিয়ে পুর কমিশনারকে মুখ্যমন্ত্রীর 'ভর্ৎসনা'র পরে ঘুম ভেঙেছে পুরসভার। নবান্নের ওই বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শহর জুড়ে রাস্তার খানাখন্দ সারানোর কাজ শুরু করেছেন পুরসভার কর্মীরা। সেই কাজ দেখতে গিয়েই নজরে পড়ে বছর বছর একই রাস্তায় টাকা খরচের বিষয়টি। একটি রাস্তা সারানোর পরে এক বছরও টেকে না কেন? উঠেছে সেই প্রশ্ন।

ধরা পড়েছে আরও একটি বিষয়। তা হল, উত্তর কলকাতার ৭৭টি ওয়ার্ডের জন্য সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের (রাস্তায় নেমে কাজ দেখার কথা যাঁদের) সংখ্যা মাত্র পাঁচ। তাঁদের মাথায় রয়েছেন পাঁচ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। অর্থাৎ, এক-এক জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে অনেকটা রাস্তা দেখতে হয়। দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকার রাস্তার হালও তাই। মূলত ঠিকাদারদের উপরেই ভরসা রাখতে হয় বলে পুরসভা সূত্রের খবর। সে সব বিষয় সামনে আসায় বিচলিত পুর কমিশনার খলিল আহমেদও। তিনি অবশ্য সোমবারও জানান, শহরের প্রতিটি খানাখন্দ বোজানোর কাজ চলছে। কেন এই হাল, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

রাস্তা নিয়ে আরও অভিযোগ উঠেছে পুর মহলে। তা হল, অনেক সংখ্যক ঠিকাদার থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি বরো এলাকায় বিশেষ বিশেষ ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানো চলছে। এ ব্যাপারে জনা কয়েক রাজনৈতিক নেতা এবং পুরসভার এক শ্রেণির ইঞ্জিনিয়ারের যোগসাজশের অভিযোগও উঠেছে। রাস্তা দফতরেরই এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ''দেখেশুনে ঠিকাদার বাছা হয়। সবাইকে কাজ দেওয়া হয় না।'' পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে রাস্তা তৈরির অনেক ঠিকাদার থাকলেও বরোর কর্তাদের যাঁরা 'ঘনিষ্ঠ', তাঁরাই সুযোগ পান। আর বলা হয়, অনেক ঠিকাদারই নাকি কাজ করতে চান না। তা কতটা সত্যি, সেটা জানার জন্য আজ, মঙ্গলবার পুরভবনে ঠিকাদারদের নিয়ে বৈঠক করছে পুর প্রশাসন।

এ দিকে, রাস্তা ঠিক রাখতে পুর কমিশনারের নির্দেশ নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে পুর মহলে। রবিবার পুরসভার ডিজি পর্যায়ের অফিসারদের নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শহরের যে সব রাস্তা পুরসভার নয়, তা-ও সারিয়ে দেবে তারা। তবে তার খরচ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। তার আগে ওই প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এর পাশাপাশি রাস্তা তৈরির উপাদানে কোনও খামতি যাতে না থাকে, উপাদানের পরিমাণ যাতে ঠিক থাকে, সবই দেখতে বলা হচ্ছে। পুর কমিশনার নিজে এ দিনও শহরের একাধিক রাস্তা ঘুরে দেখেছেন। সন্ধ্যায় তিনি জানান, সব রাস্তার খানাখন্দ সারাই হবে।