বন্যা বিধ্বস্ত কেরল:‘দেবতার রোষ’-ই কি দায়ী?


আদৌ কি দেবতার রোষ ? নাকি বন্যাকে নিয়ে ধর্মীয় রাজনীতির ছলকলা ? কেরলের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর যেভাবে আরবিআই কর্তা গুরুমূর্তি মন্তব্য করেছেন তারই কারণ অনুষন্ধান করা হল৷ উঠে এসেছে মহিলাদের দাবিয়ে রাখার নীতি, যা দুর্যোগের আড়ালে প্রচারের হাতিয়ার করছে করা হচ্ছে৷

গৌতমী সেনগুপ্ত: আরবিআই কর্তা তথা সংঘ ঘনিষ্ঠ এস গুরুমূর্তির পথে হাঁটছেন অনেকেই৷ সত্যিই তো, একশ বছরে এত বড় বিপর্যয় কেরল দেখেনি৷ কেন প্রকৃতির এই রোষ? হাওয়া অফিস একটানা ভারী বৃষ্টি,নিম্নচাপকে দায়ী করলেও আরবিআই কর্তা কারণ বার করতে সফলতা দেখিয়েছেন৷ শনিবার তিনি টুইট করেন, কেরলের প্রসিদ্ধ সবরিমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশে সুপ্রিম কোর্ট ছাড়পত্র দিয়েছে বলেই কেরল ভাসছে৷ শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্তে দেবতা আনাপ্পা ক্ষুব্ধ৷ বিষয়টি একবার খতিয়ে দেখা উচিত বলেও জানান গুরুমূর্তি৷ এবার আরবিআই কর্তা একা নন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেরলে তছনছ হয়ে যাওয়ার পিছনে বড় অশুভ শক্তি কাজ করছে বলে মেনে নিচ্ছেন অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ৷ গো রক্ষা কমিটির এক সদস্য মনে করেন, গো -হত্যা বাড়ছে বলেই দেবতা রুষ্ট হচ্ছেন৷ আর সেই কারণে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে 'ভগবানের দেশ' ৷

কোথাও যেন বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু তর্কে বহুদূরের মতই অবস্থা৷ আনাপ্পা দেবতার ক্ষুব্ধ হয়ে যাওয়াকে মেনেও নিচ্ছেন সাড়ে তিন লাখ ঘরছাড়াদের অনেকেও৷ মনে করা হচ্ছে, তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থলের রাজ্যটি হয়ত গাফিলতির শিকার৷ কোথাও হয়ত গো মাতার পুজোয় খামতি থাকছে ! হয়ত বা আরবিআই কর্তার কথাই ঠিক৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক জানালেন, মন্দির,পূজা-অর্চনা নিয়ে থাকা কেরলের মানুষ দেবতার অভিশাপকে বড্ড মেনে চলেন৷ সেখানে আরবিআই কর্তা বা রাজনৈতিক নেতাদের মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া এই ধরণের মন্তব্যকে তাঁরা গম্ভীর ভাবেই নিচ্ছেন৷

ঠিক কী বলেছিলেন আরবিআই কর্তা এস গুরুমূর্তি? তিনি জানান, কেরলে ভাসছে কারণ, সবরীমালা মন্দিরে মহিলারা প্রবেশ করতে চাইছেন আর শীর্ষ আদালতও সায় দিচ্ছে৷ আরবিআই কর্তার পাশাপাশি গো রক্ষা কমিটির এক অংশের মত, কেরলে গো হত্যা বাড়ছে বলেই ভগবান রেগে যাচ্ছেন৷ আর সেই কারণেই এত বড় শাস্তি পাচ্ছেন কেরলবাসী৷ যদিও আরবিআই কর্তার বক্তব্য নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে৷ বাম,কংগ্রেস সবাই সমালোচনা করেন৷ বিষয়টি পরে ধামাচাপা পড়ে যায়৷ তারপরেই গো হত্যা প্রসঙ্গ গুরুত্ব পায়৷

S Gurumurthy@sgurumurthy
'Supreme court judges may like to see if there is any connection between the case and what is happening in Sabarimala. Even if there is one in a million chance of a link people would not like the case decided against Ayyappan.'


অবশ্য,আমাদের খোঁজ এখানেই শেষ হয়নি৷ কী মনে করছে সবরীমালা মন্দিরের কমিটি ত্রিভাঙ্কুর দেবসম? আদৌ কি রেগে আছেন দেবতা আনাপ্পা? বা গো-মাতা? এই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় নেই একেবারে৷ কারণ, আপাতত ঐতিহ্যবাহী সবরীমালা মন্দিরে যেখানে ১০-৫০ বছর বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকার নেই, সেই মন্দিরই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য খোলা৷ বানভাসি মানুষ মন্দিরের একটি অংশেই আশ্রয় নিয়েছেন৷

বন্যায় সবরীমালা মন্দিরের অনেকটাই ভাসছে৷ তাতেও খোলা হয়েছে মন্দিরের দরজা৷ শীর্ষ আদালতে চলা মামলাকে উড়িয়ে দেবতার ঘরে মানবতার ধর্মই পালন করছেন মন্দিরের পূজারীরা৷ খোলা হয়েছে ক্যাথলিক চার্চের দরজাও৷ দুর্গতদের আশ্রয় দিতে মন্দির,চার্চে অবাধ প্রবেশ বন্যা দুর্গতদের৷ কোথাও যেন অশুভ শক্তির প্রভাবকে হার মানাচ্ছে মানবতাবাদ৷ যা গো-রক্ষক ও আরএসএস ঘনিষ্ঠ আরবিআই কর্তার মুখের উপর সঠিক জবাব বলে মনে করা হচ্ছে৷