মায়ের ঘুম ভাঙছে না, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাইবোন


কাটোয়া : রেল লাইনের ধারে ছোট্ট ঝুপড়ি৷ মেঝেতে পড়ে আছে এক মাঝবয়সি মহিলার নিথর দেহ৷ মহিলার ঠিক মাথার কাছে বসে আছে দুই শিশু৷ একটি বছর চারেকের মেয়ে৷ তার কোলে বছর দুয়েকের একটি ছেলে৷ ছেলেটি একভাবে তাকিয়ে আছে মহিলার মুখের দিকে, যেন মহিলার চোখ খোলার অপেক্ষা করছে সে! মায়ের ঘুম ভাঙলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে বুকের উপর৷ আর মেয়েটির দু'চোখে অনন্ত শূন্যতা৷ মায়ের ঠিক কী হয়েছে বুঝে উঠতে পারেনি সে-ও৷ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঝুপরির সামনের ভিড়ের দিকে৷ যেন জানতে চাইছে, মায়ের ঘুম কি ভাঙবে না? মা না উঠলে যে খাবারও জুটবে না ওদের৷

মামনি আর বিশু দুই ভাইবোন৷ মদ্যপ বাবা কবেই ছেড়ে গিয়েছে ওদের৷ একবার খোঁজও নেয় না ছেলেমেয়েরা বেঁচে আছে কি না৷ সংসারে নিজের বলতে ছিল শুধু মা-ই৷ আর ঠিকানা কাটোয়া রেল স্টেশনের সাত নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশের একটা ঝুপরি৷ তাও ঝুপরিটাও আবার এক হকারের৷ রাতটুকু শুধু মা ও দুই শিশুকে থাকতে দিতেন তিনি৷ সারা দিনই প্ল্যাটফর্মেই দিন কাটত তাদের৷ মা কাগজ কুড়িয়ে ভিক্ষা করে যা টাকা পেত, তাই দিয়েই চলত তিনটে পেট৷ সোমবার সকালটা বদলে দিল সব কিছু৷ হঠাৎ করেই শেষ আশ্রয় হারাল অবুঝ শিশু দু'টি৷

এদিন সকালে প্রথমে কয়েকজন হকার দেখেন বিষয়টি৷ ঝুপরির মেঝেতে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন সরস্বতী মারান্ডি৷ তাঁর মাথার কাছে বসে আছে দু'টি শিশু৷ ছেলেটি মায়ের গায়ে হাত দিয়ে ডাকারও চেষ্টা করছে৷ মা যে আর উঠবে না, তা বোঝারও ক্ষমতা নেই শিশুদের৷ বিমল মণ্ডল নামে এক চা বিক্রেতা বলেন, 'দৃশ্যটা দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল৷ মা মারা গিয়েছে, মাথার কাছে চুপ বসে আছে ছেলেমেয়ে৷ ওরা বুঝতেও পারছে না, মা আর নেই৷ এর চেয়ে নির্মম আর কী হতে পারে, আমার জানা নেই৷ ওদের গিয়ে যে বলব, তোদের মা মারা গিয়েছে, সে সাহস আমি জোটাতে পারিনি৷' একই কথা বলেন মিঠু শেখ৷ তাঁর ভাষায়, 'চার বছর ধরে সরস্বতী এখানে থাকছে৷ রোজই ওদের দেখি৷ এই দৃশ্য কোনও দিন দেখতে হবে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি৷ শিশু দু'টিকে দেখে নিজেকেও খুব অসহায় মনে হচ্ছিল৷'