পিএফ থেকে অগ্রিম টাকা তুলতে ও ট্রান্সফার করতে আবেদন অনলাইনে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক


নয়াদিল্লি : কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ) থেকে অগ্রিম টাকা তুলতে গেলে এবার আর কাগুজে ফর্ম (এফ-৩১) গ্রাহ্য করবে না কেন্দ্রীয় সরকার। নির্দিষ্টভাবে আবেদন করতে হবে একমাত্র অনলাইনেই। একইভাবে ইপিএফ অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারের ক্ষেত্রেও (ফর্ম-১৩) আবেদন জানাতে হবে শুধুমাত্র অনলাইন ব্যবস্থায়। এমনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের আওতাধীন কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠন (ইপিএফও)। কেন্দ্রের এহেন সিদ্ধান্তের ফলে এই সামাজিক সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত কয়েক কোটি গ্রাহক চরম সমস্যায় পড়তে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ইপিএফের পেনশন প্রকল্প 'এমপ্লয়িজ পেনশন স্কিমে'র (ইপিএস) ক্ষেত্রে আগের নিয়মে আপাতত কোনওরকম বদল ঘটানো হচ্ছে না। সেখানে আগের মতোই ইপিএফও'র সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কার্যালয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম (এফ-১০ডি) জমা দিয়েই কাজ চালাতে পারবেন এর আওতাভুক্ত অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীরা।

কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যেই এহেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আপাতত শুধুমাত্র তিনটি ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ চালু হলেও আগামীদিনে ইপিএফও'র সর্বত্র এই ব্যবস্থা চালু করে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, এর আগে তৎকালীন প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার ভি পি জয় ঘোষণা করেছিলেন যে, ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট থেকে কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠনের যাবতীয় কাজ হবে একমাত্র অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমেই। ইপিএফও'র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একই সঙ্গে সবক্ষেত্রে এই অনলাইন ব্যবস্থা চালু না করে ধাপে ধাপে তা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকারি সূত্রের খবর, ইপিএফের অগ্রিম টাকা তোলা এবং ইপিএফ অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার করা ছাড়াও এর ফাইনাল সেটেলমেন্ট সংক্রান্ত যে কোনওরকম কাজও এবার থেকে অনলাইনে মেটাতেই বাধ্য থাকবেন সাধারণ গ্রাহক। তবে ইপিএফ পেনশনের পাশাপাশি কোনও গ্রাহকের মৃত্যু হলে তাঁর দাবিদাওয়া সংক্রান্ত যে কোনওরকম কাজ মেটানোর ক্ষেত্রেও অবশ্য অনলাইন ব্যবস্থা এই মুহূর্তে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। ইপিএফের বিভিন্ন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত কার্যকলাপ মেটানোর জন্যও অনলাইন ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক নয়। এবং এই পরিস্থিতিতেই এর আওতাভুক্ত সমস্ত গ্রাহককে অবিলম্বে নিজেদের ইউএএন (ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর) সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছে ইপিএফও। একইসঙ্গে যে গ্রাহকেরা এখনও পর্যন্ত কেওয়াইসি জমা দেননি, তাঁদের দ্রুততার সঙ্গে তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এক্ষেত্রে কয়েক কোটি গ্রাহকের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা কেন তৈরি হচ্ছে? প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠনের আওতাভুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। আর এর মধ্যে একটি বড় অংশই গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবার হাল অত্যন্ত খারাপ। এই পরিস্থিতিতে অগ্রিম টাকা তোলার পদ্ধতিই যদি সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ভিত্তিক হয়ে যায়, তাহলে ওই অংশের মানুষদেরই সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা। সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ইপিএফের ন্যূনতম মাসিক পেনশনের পরিমাণ এক হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে দু'হাজার টাকা করার দাবি থাকলেও, তাতে কর্ণপাত করছে না কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকী সংসদে দাঁড়িয়ে এ ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেও এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে ইপিএফও অছি পরিষদের বৈঠক পর্যন্ত ডাকেননি কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গওয়ার। ইপিএফে সুদের হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবথেকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইদিকে নজর না দিয়ে কেন্দ্র অনলাইন-অফলাইন ব্যবস্থা নিয়েই বেশি আগ্রহী।