বেসরকারি স্কুলের বেতন বেঁধে দিতে উদ্যোগী রাজ্য


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব মাথায় রেখেই রাজ্যে বেসরকারি স্কুলের ফি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হল স্কুলশিক্ষা দপ্তর। কোন এলাকার স্কুল, কেমন পরিকাঠামো, কী সুযোগসুবিধা--- তার নিরিখেই ফি নির্ধারণ করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'ওই খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হবে মন্ত্রিসভায়। সেখানে সম্মিলিত অনুমোদনের পরই তা বিল আকারে যাবে বিধানসভায়।'সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বেসরকারি স্কুলে ফি সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব নবান্নে পাঠানো হয়েছে। 

ইতিমধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার খরচও বেঁধে দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন। চিকিৎসার বিভিন্ন পরিষেরার ক্ষেত্রে হাসপাতালের খরচের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বমূখী খরচ নিয়ে মধ্যবিত্ত জেরবার।

স্কুলশিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, স্কুলের অবস্থান, কতজন পড়ুয়া, কত শিক্ষক, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন খাতে স্কুলের খরচ, স্কুলে খেলার মাঠ আছে কি না এবং অন্য আর কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, স্কুলের ফলাফল কেমন হয়, এ-সবই প্রাথমিক ভাবে বিবেচ্য বেসরকারি স্কুলের ফি নির্ধারণে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি স্কুলগুলির চার-পাঁচটি ক্যাটিগরি বা স্তর থাকবে। প্রথম দিকে থাকা স্কুলের ফি তুলনামূলক বেশিই হবে। শুধু ক্যাটিগরি নয়, স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ভিত্তিতে পৃথক ফি-এর স্তর তৈরি করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে শুক্রবার জানান, দপ্তর বিলের খসড়া তৈরি করেছে। এই খসড়ার তৈরির ক্ষেত্রে তামিলনাড়ু-সহ অন্য রাজ্যে এ ধরনের বিলের কথাও মাথায় রাখা হয়েছে। সরকার অযথা কারও উপর আর্থিক বোঝা চাপাতে চায় না।

মুখ্যমন্ত্রী ২০১৭ সালের ৩১ মে কলকাতার টাউন হলে মহানগর ও শহরতলির বেসরকারি স্কুলগুলি নিয়ে সেল্ফ রেগুলেটরি কমিটিও গঠন করে দিয়েছিলেন। তাতে কলকাতা নামজাদা বেসরকারি স্কুলের প্রতিনিধিরা ছাড়াও স্কুলশিক্ষা দপ্তরের কর্তারা ছিলেন। এই খসড়া তৈরিতে সেই কমিটির সুপারিশও মাথায় রাখা হয়েছে। স্কুলগুলি বছরে একবার মাত্র ফি বাড়াতে পারবে। সে জন্য আগাম অনুমতি আবশ্যক। সরকার নিযুক্ত কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সেই ফি বাড়াবে। ফি বাড়ানোর আগেও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। স্কুলগুলিকে পড়ুয়াদের ফি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। কোনও স্কুলই শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে পড়ুয়াদের থেকে কোনও ফি নিতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানকে তাদের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। 

স্কুল পড়ুয়াদের প্রতি কোনও শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠলেও কমিশনের সদস্যরা তা নিয়ে খোঁজখবর করতে পারেন। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী যে-সব বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাঁদের সঙ্গেও এই খসড়া চূড়ান্ত করার আগে কথা হতে পারে। ২০১৯ সালের ভোটের আগে সাধারণ মানুষকে সুবিচার দিতে তৎপর সরকার।