গলায় কলা আটকে মৃত্যু আট মাসের শিশুর


অন্য দিনের মতোই আট মাসের ছেলেকে কোলে বসিয়ে কলা খাওয়াচ্ছিলেন বাবা। হঠাৎই গিলতে গিয়ে শিশুটির শ্বাসনালীতে তা আটকে যায়। ছোট্ট শিশু বোঝাতে পারেনি কষ্ট। ছটফট করতে শুরু করে সে। পরিজনেরা বুঝতে পারেন শিশুর শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গিয়েছে। তৎক্ষণাৎ মুখে আঙুল দিয়ে কলা বার করার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু তা-ও আটকে যাওয়া কলা বার করা যায়নি। অবশেষে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কয়েক মিনিট অক্সিজেন দেওয়ার পরেই মৃত্যু হয় ওই শিশুর।

মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ পর্ণশ্রী থানা এলাকার অরবিন্দ পল্লিতে। মৃত শিশুটির নাম অঙ্কিত সাউ। তার বয়স আট মাস। পরিবার সূত্রের খবর, আগেও কলা খাওয়ানো হয়েছিল অঙ্কিতকে। কিন্তু কোনও অসুবিধা হয়নি। এ দিন চোখের সামনে ছেলের এমন পরিণতি দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন মা পুনম সাউ এবং বাবা প্রদীপ সাউ। কিছু ক্ষণ হাসপাতালে চিকিৎসকদের নজরদারিতে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশাহারা গোটা পরিবার।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে যখন অঙ্কিতকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন শিশুটি প্রায় নেতিয়ে পড়েছিল। কিছু ক্ষণ অক্সিজেনও দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ দম আটকে থাকায় বাঁচানো যায়নি অঙ্কিতকে।
আরও পড়ুন: খাটের তলায় শিশুর দেহ, ধৃত মা
এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছেন বিধ্বস্ত পরিজনেরা। অঙ্কিতকে মা খাওয়াচ্ছিলেন, এমনই কথা শোনা যায় তাঁদের আলোচনায়। যদিও হাসপাতাল সূত্রের খবর, কোলে বসিয়ে ছেলেকে খাওয়াচ্ছিলেন বাবা। কলার ছোট অংশ আঙুলে টিপে নরম করে অঙ্কিতকে দিচ্ছিলেন তিনি। তখনই কোনও ভাবে শ্বাসনালীতে কলার অংশ আটকে যায়। বাড়িতেই কিছু ক্ষণ তা বার করার চেষ্টা করা হয়। এ দিন হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে অঙ্কিতের বাবাকে বলতে শোনা যায়, ''কী করে ফেললাম আমরা!''

গলায় কলা আটকে শিশু মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। রাজ্যে আগেও এমন অঘটন ঘটেছে একাধিক বার। এত ছোট শিশুকে কি কলা খাওয়ানো উচিত? অঙ্কিতের মৃত্যুর পরে ফের সেই প্রশ্ন উঠে আসছে। বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার উত্তম মজুমদার বলেন, ''কলা খাওয়ানো যায়। তবে এত ছোট শিশুর ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা তো নিতেই হবে। অসাবধান হলে জলের এক বিন্দুও শ্বাসনালীতে ঢুকে বিপত্তি ঘটাতে পারে। সেখানে কলা বা খাবারের অংশ আটকে যাওয়া তো অনেক বড় বিষয়।''

একই কথা বলছেন শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। তাঁর মতে, এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আটকাতে বাড়তি সতর্কতা আবশ্যিক। তিনি বলেন, ''কলা বা যে কোনও খাবার পুরো চটকে তরল করে নিতে হবে। অল্প অল্প করে শিশুর জিভে দিতে হবে। বাচ্চা খেতে না চাইলে জোর করা উচিত নয়। তাঁর পরামর্শ, ''শিশুকে বসিয়ে খাওয়ান। অনেকে মনে করেন, বাচ্চা কাঁদতে কাঁদতে খেয়ে নেবে। কিন্তু খাওয়ার সময়ে কাঁদলে খাবার দেবেন না। কারণ কান্নার পরে শিশু যখন শ্বাস নেবে, তখন কলা বা খাবারের অংশ শ্বাসনালীতে ঢুকে যেতে পারে।
অঙ্কিতের মৃত্যু নিয়ে হাসপাতালের তরফে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, হাসপাতালে কিছু ক্ষণ চিকিৎসার পরে মৃত্যু হয়েছে অঙ্কিতের। তা ছাড়া মৃত্যুর কারণও চিকিৎসকদের কাছে স্পষ্ট।