বোর্ড গঠন ঘিরে গুলি-বোমা পুরুলিয়ায়, হত বিজেপির দুই সমর্থক

অশান্তির দায় নিয়ে পাল্টা দোষারোপে মেতেছে তৃণমূল-বিজেপি।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই জেলায় শাসক দলকে সমানে টক্কর দিয়েছে বিজেপি। রাজ্যে একক শক্তিতে তাদের জেতা গ্রাম  পঞ্চায়েতের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি এই জেলায়। সেই পুরুলিয়াতেই সোমবার পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে মৃত্যু হল দুই বিজেপি সমর্থকের। বিজেপির দাবি, এ দিন জয়পুর ব্লকের ঘাগরা পঞ্চায়েত অফিসের বাইরে পুলিশের গুলিতে মারা যান তাদের দুই সমর্থক নিরঞ্জন গোপ (৩০) ও দামোদর মণ্ডল (৫৯)। পুলিশ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ''কোনও মৃত্যুই কাম্য নয়। তবে পুরুলিয়ায় তৃণমূল ছিল না। পুলিশের সঙ্গে সরাসরি গোলমালে নেমেছে। আমি সবাইকেই বলছি, শান্তিপূর্ণ ভাবে পঞ্চায়েত গড়ুন। আজকে আমি ১৫-২০টা জায়গায় কথা বলেছি। দলকেও বলেছি শান্তিপূর্ণ ভাবে করতে।''

ঘাগরা পঞ্চায়েতে মোট আসন ১১। তৃণমূল, বিজেপি এবং সিপিএম পেয়েছে ৩টি করে আসন। ফব ও নির্দল একটি করে। তাই বোর্ড গঠনে গোলমালের আশঙ্কা ছিলই। পুলিশের সঙ্গে ইএফআর জওয়ানও মোতায়েন করা হয়েছিল।

এই পঞ্চায়েতে প্রধানের পদটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। দাবিদার ছিল বিজেপি। ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধি দাবি করেন, বিজেপি সদস্যের জাতিগত শংসাপত্র জাল। বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য শঙ্করনারায়ণ সিংহদেব বলেন, ''প্রশাসন শং‌সাপত্র অন্যায় ভাবে বাতিল করতেই মানুষ প্রতিবাদ জানান। তখনই পুলিশ লাঠি চালায়। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। গুলি ছোড়া শুরু হয়।'' বিজেপির দাবি, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ঘাগরার বাসিন্দা নিরঞ্জনের। সন্ধ্যায় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে মারা যান লাগোয়া ছটকা গ্রামের দামোদর।
 
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ''জয়পুরে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ডের মধ্যে তিনটি বোর্ডই আমাদের তৈরি করার কথা ছিল। দু'টি পেরেছি। ঘাগরায় পুলিশ জালিয়ানওয়ালাবাগের মতোই নির্বিচারে গুলি চালায়।''

যদিও পুরুলিয়ার এসপি আকাশ মাঘারিয়ার দাবি, পুলিশ শুধু শূন্যে দু'রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। তাতে কারও মৃত্যু হয়নি। তাঁর আরও দাবি, পুলিশকে লক্ষ্য করেই বোমা ছোড়া ও গুলি চালানো হয়েছে। দামোদরকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন, সেটাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে সেটা ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে বলে পুলিশ সুপার জানান। দু'টি দেহেরই ময়না-তদন্ত আজ, মঙ্গলবার হবে সদর হাসপাতালে।

এ দিনই পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে বিজেপি-তৃণমূল বোমা-গুলির লড়াই হয়েছে প্রধান নির্বাচন নিয়ে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বিজেপির এক জয়ী সদস্য। সাঁতুড়ি ব্লকের মুরাড্ডিতে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। জঙ্গলমহলের অন্য যে জেলায় বিজেপি ভাল ফল করেছে, সেই ঝাড়গ্রামে অবশ্য এ দিন বিনা রক্তপাতে বেশ কিছু পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি। পশ্চিম মেদিনীপুরেও ১৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টিতে প্রধান হয়েছেন বিজেপি সদস্য।