রাতারাতি অন্তত ৩৫০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করল আভিভা ইন্ডিয়া, বৃহৎ এই 'লে-অফ' নিয়ে নিশ্চুপ সংস্থা


কাকপক্ষীতেও টের পেল না। প্রায় নিশ্চুপেই অন্তত ৩৫০ জন কর্মীকে ছেঁটে ফেলল আভিভা ইন্ডিয়া। ২১ অগাস্ট এই ৩৫০ কর্মীকে জানিয়ে দেওয়া হয় আভিভা ইন্ডিয়ায় আর তাঁদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংস্থার দেওয়া রফাসূত্রে রাজি হয়ে গিয়ে তাঁরা যেন পদত্যাগ করেন। সেই মতো দেশজুড়ে অন্তত ৩৫০ কর্মী পদত্যাগ করেন।

সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে এক্সিকিউটিভ স্তরে এই ছাঁটাই হয়েছে। সারা ভারতে প্রায় ১১০০ কর্মী নিয়ে কাজ করছিল আভিভা ইন্ডিয়া। এই ছাঁটাইয়ে সেই সংখ্যাটা এইি মুহূর্তে হাজারের নিচে নেমে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই আরও কিছু কর্মী ছাঁটাই হতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পদত্যাগ করা কর্মীদের ৬ মাসের অগ্রিম বেতন থেকে আরও বেশকিছু আর্থিক সহায়তাও দিয়েছে আভিভা ইন্ডিয়া। আপাতদৃষ্টিতে এই সহায়তাকে সংস্থার মহানুভবতা বললেও, অধিকাংশেরই বক্তব্য একটা কাজ চলে যাওয়ার সঙ্গে এর কোনও তুলনা হতে পারে না। ৩৫০ কর্মীদের মধ্যে অধিকাংশেরই বয়স ২৯ থেকে ৪০-এর মধ্যে। এই বয়সে নতুন করে কাজ পাওয়া সহজ কথা নয় বলেই তাঁদের বক্তব্য।

আভিভা যে এক বিশাল কর্মী সংকোচের দিকে চলেছে তার ইঙ্গিত কর্মীরা পেতে শুরু করেছিলেন অগাস্ট মাসের শুরুতেই। কারণ, ডাবর ইন্ডিয়া ও আভিভার জয়েন্ট ভেঞ্চার আভিভা ইন্ডিয়া। কিন্তু, সরকারিভাবে এই খবরের সত্যতা জানা না গেলেও সূত্রে দাবি করা হয়েছে আভিভা ইন্ডিয়ায় তাঁদের অংশিদারিত্ব ছেড়ে দিয়েছে ডাবর। ভারতীয় এই সংস্থার কাছে আভিভা ইন্ডিয়ার ৫১ শতাংশ শেয়ার ছিল। ডাবর আভিভা ইন্ডিয়া থেকে হাত তুলে নিতেই সঙ্কটে পড়েছে আভিভা গ্রুপ। ঢাক-ঢোল পিটিয়েই বছর দশেক আগে ভারতীয় বিমা ক্ষেত্রে পা রেখেছিল আভিভা।

যে দাপটের সঙ্গে বিমা ক্ষেত্রে আভিভা ব্যবসার বৃদ্ধি চেয়েছিল তা কিন্তু, কখনই সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে ম্যাক্স-বুপার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারতের বাজারে ঢুকে পড়ায় বাজার দখল আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনিতেই ভারতীয় বিমা ক্ষেত্রে ৯৯শতাংশ ক্রেতাই এলআইসি-র প্রতি আস্থাশীল। ২০১১ সালের পর থেকেও আরও বেশকিছু আন্তর্জাতিক বিমা সংস্থা বিভিন্ন দেশীয় সংস্থার সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধে ভারতের বাজারে ঢুকে পড়ে।

২০১৩ সালে এমন খবরও রটে যায় আভিভা ইন্ডিয়া তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চলেছে। কারণ হিসাবে ব্রিটিশ এই বিমা সংস্থা সে সময় বলেছিল যে ব্যবসার বৃদ্ধির আশাতীত সাফল্য না আসাতেই গোটানোর ভাবনা চলছে। এই সময়ই আভিভার বিমা ব্যবসায় অংশিদারিত্ব কেনে ডাবর। কিন্তু, তারপরেও এই সংস্থার বিমা সে ভাবে ভারতীয় মার্কেটে বিস্তার লাভ করেনি। ফলতই আভিভার ব্যবসার হাতবদল হওয়া বা সংস্থার বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই নানা গুজব রটে। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে পুজোর আগেই আভিভা ইন্ডিয়ায় চাকরি হারালেন ৩৫০ জন। গুরুগ্রাম থেকে শুরু করে দিল্লি, কলকাতা- সবখানেই এই ছাঁটাই হয়েছে। কলকাতা অফিসেও কর্মীর সংখ্য়া অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। পুজোর আগে চাকরি হারিয়ে কার্যত মানসিক হতাশায় আভিভা ইন্ডিয়ার বহু বাঙালি কর্মী। সূত্রের খবর আভিভা কোনও এক ব্যাঙ্ক সংস্থা তাদের বিমা ব্যবসা বিক্রি করে ভারতের বাজার থেকে পিছু হঠতে চাইছে।

২০০৮ সালের রিসেশন বা সাব-প্রাইম ক্রাইসিসের সময় থেকেই ভারতীয় চাকরির বাজারে ঘন-ঘন চাকরি হারানোর যে রেওয়াজ শুরু হয়েছিল গত কয়েক বছরে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছরে ব্যাঙ্কিং সেক্টর থেকে মিডিয়া সেক্টর, তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্র, কল-কারখানায় লাগাতার বিশাল সংখ্যায় কর্মী ছাঁটাই হয়ে চলেছে। ২০১৭ সালেই ভারতীয় তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ হারিয়েছেন ৫৬,০০০ জন। মিডিয়া সেক্টরে গত কয়েক বছরে কাজ হারিয়েছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এই সব ছাঁটাই-এর পিছনে যেমন রয়েছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তেমনি রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আমদানি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতে এখন ট্রিলিয়ন অর্থনীতির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। কিন্তু, অর্থনৈতিক এই বিকাশের বাজারে ভারতের চাকরি বাজারে ছাঁটাইয়ের বহরের ছবিটা কিন্তু খুব একটা ভালো ইঙ্গিত নয়।