কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় খুন যুবতি, গ্রেপ্তার শ্বশুর ও স্বামী


সোনারপুর : কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় যুবতিকে খুনের অভিযোগ উঠল তাঁর স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি সোনারপুর থানা এলাকার গোবিন্দপুরের। মৃতার বাবা সোনারপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় মৃতার স্বামী ও শ্বশুরকে। তাদের বিরুদ্ধে বধূহত্যার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

সোনারপুর থানা এলাকার গঙ্গাজোয়ারা এলাকার বাসিন্দা ওই যুবতি। বছর চারেক আগে স্কুলে পড়ার সময়েই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় লাঙলবেড়িয়ার বাসিন্দা সুজন মণ্ডলের। সুজন রাজমিস্ত্রির কাজ করে। এরপর বাড়ির অমতে তাঁরা বিয়ে করে। তাঁদের এক সন্তানও রয়েছে। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তাঁর উপর শুরু হয় অত্যাচার। পণের দাবিতে অত্যাচার করা হত বলে অভিযোগ।

বাড়িতে কেউ না থাকলেই যুবতির শ্বশুর তপন মণ্ডল তাঁকে কুপ্রস্তাব দিত বলে অভিযোগ। শিশুকন্যার সামনেই জোর করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টাও করা হত। স্বামীকে একথা বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই, বিষয়টি মা ও মাসিকে জানিয়েছিল ওই যুবতি। আলোচনার মাধ্যমে সাময়িক সুরাহা হলেও কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি। উলটে ফাঁকা বাড়িতে বউমাকে একা পেলেই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত শ্বশুর।

গতকালও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। বাড়িতে শিশুকন্যাকে নিয়ে একাই ছিলেন ওই যুবতি। ফাঁকা বাড়িতে তাঁকে একা পেয়ে মত্ত অবস্থায় শ্বশুর তপন মণ্ডল জোর করে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকে। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে দরজা বন্ধ করে দিলেও শেষরক্ষা হয়নি। জল খাওয়ার অজুহাতে দরজা খুলতে বাধ্য করা হয় তাঁকে। এরপর তাঁকে নির্যাতনের চেষ্টাও করা হয়। শিশুকন্যার সামনেই চলতে থাকে দু'জনের ধস্তাধস্তি। এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। অভিযোগ, এরপরই স্ত্রী ও ছেলেকে ডাকে ওই ব্যক্তি। তিনজনে মিলে তাঁকে মারধর করতে থাকে। 

গতকাল দুপুরের দিকে যুবতির বাবার বাড়ির লোকজনকে তাঁর অসুস্থতার খবর দেয় স্বামী সুজন। পরিবারের লোক সেখানে পৌঁছে দেখেন কাপড় ঢাকা দিয়ে বারান্দায় শোওয়ানো রয়েছে তাঁর দেহ। তাঁদের সন্দেহ হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে প্রশ্ন করেন। তখনই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। জোর করলে জানানো হয়, তাদের মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। 

এরপর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে আটকে রেখে সোনারপুর থানায় খবর দেন তাঁর পরিজন ও স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থানে পৌঁছে ওই যুবতিকে সোনারপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। রাতে সোনারপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

মৃতার বাবা বলেন, "আমার মেয়ের উপর নানাভাবে অত্যাচার চালাত ওর শ্বশুর। মেয়ে লজ্জায় আমাদের সবটা খুলে বলতে পারেনি। কিন্তু, ইঙ্গিত দিয়েছিল। একবার জামাইয়ের সামনেই ওকে শাবল দিয়ে মারার চেষ্টাও করেছিল। তা ছাড়া, নিজের আগের বউকেও খুন করে জেলে গিয়েছিল ওর শ্বশুর। এবার একইভাবে আমার মেয়েটাকে মারল। এই ঘটনায় আমার জামাই আর তার মাও জড়িত। আমি চাই ওদের সবার শাস্তি হোক। যার আমার ছোট্ট মেয়েটাকে এভাবে মারল, তাদের যেন ফাঁসি হয়।"