সীমান্তে অবাধে পাচার হচ্ছে ‘বোল্ডার’, ‘পেপসি’, ‘লাঠি’


বালুরঘাট: এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায় অনায়াসে পাচার হয়ে যাচ্ছে 'বোল্ডার', 'পেপসি', 'লাঠি'৷ সীমান্তের কাঁটাতার আর সীমান্তরক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে চলছে দেদার পাচারপর্ব৷ সুবিধামতো বালুরঘাট, তপন, গঙ্গারামপুর থেকে এগুলি সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কুমারগঞ্জ এলাকায়৷ সূর্য পশ্চিমে ঢললেই এ দেশ ছেড়ে তাদের ঠিকানা হচ্ছে পদ্মাপাড়ের কোনও গ্রাম৷

বোল্ডার, পেপসি কিংবা লাঠি আসলে এক একটা গরু৷ পাচারকারীদের কোড ল্যাঙ্গোয়েজ৷ সীমান্তের চোরাকারবারীদের ভাষায় বোল্ডার হল পূর্ণবয়স্ক গরু৷ যেসব গরু মাঝারি আকারের৷ তাদের ডাকা হয় লাঠি৷ আর বাছুর হল পেপসি৷ গরুর আকার অনুযায়ী কোড ল্যাঙ্গোয়েজে যেমন প্রকারভেদ৷ তেমনই তারতম্য রয়েছে দামেও৷

হাট থেকে দিনেরবেলা গরুগুলি সীমান্ত এলাকায় পৌঁছলেও বিএসএফ ও পুলিশের তরফে কেন সেগুলি আটকানো হয় না তা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। পুলিশের তরফে এ ব্যাপারে অবশ্য কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷
 
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএফ-এর এক আধিকারিকের কথায়, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ হিলি-সহ অন্যান্য সমস্ত এলাকাতেই গরু পাচার তো দূর সামান্য ছোটখাটো চোরাকারবারও পুরোপুরি বন্ধ। বেশির ভাগ এলাকাতেই জলপথে নজরদারি চালাতে স্পিড বোট, নজরদারি নৌকা নামানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন কুমারগঞ্জের এইসব এলাকা দিয়ে গরু পাচার চলছে এরকম কোনও অভিযোগ বিএসএফ'র কাছে আসেনি৷

বালুরঘাট ও জেলার অন্যান্য এলাকায় গরুর হাট থেকে কিনে নিয়ে পিকআপ ভ্যান অথবা ভুটভুটিতে করে সোজা কুমারগঞ্জের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সমজিয়া এলাকার বালুপাড়া, রসুলপুর, দাউদপুর-সহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পৌঁছে যাচ্ছে। দুপুরে বালুরঘাট-মোল্লাদীঘি ভায়া ফকিরগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও নিত্যযাত্রীদের কাছে এ দৃশ্য অতি পরিচিত।

কীভাবে চলে গরু পাচার! গরুগুলি পৌঁছনোর পর শুধু সন্ধে নামার অপেক্ষা মাত্র। রাত হতেই আত্রেয়ী নদী সংলগ্ন উন্মুক্ত সীমান্ত এলাকায় 'বোল্ডার'দের জলে নামিয়ে দেওয়া হয়। গরুগুলি সাঁতরে পার হয়ে যায় নদী৷ ওপারে পৌঁছলে বাংলাদেশী চোরাকারবারিরা তা নিজেদের হেফাজতে নিয়ে চলে যায়।

শুধু যে উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়েই বেআইনি এই কারবার চলছে তা নয়। কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে এমন এলাকাগুলি দিয়েও রাতের অন্ধকারে অবাধে 'পেপসি' ও 'লাঠি'দের পাচার করা হয়৷ এই সমস্ত এলাকাগুলিতে বাঁশের মই ও কাঠের পাটাতন ব্যবহার করে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে তা পৌঁছে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

এলাকায় বিএসএফ ও পুলিশ থাকলেও কীভাবে এই কারবার চলছে সে প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা অবশ্য 'খাঁড়া লাইন'-এর কথা জানালেন৷ গরু পাচারকারীদের ভাষায় খাঁড়া লাইন হল প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সীমান্তের নির্ধারিত পয়েন্টে নজরদারি শিথিল করে দেওয়া। যা বিএসএফ বা পুলিশের উপরতলার আধিকারিকরা জানতেও পারেন না বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

ভুটভুটি চালক ইয়াকুব মণ্ডল বিভিন্ন হাট থেকে গরু বোঝাই করে প্রকাশ্য রাস্তা দিয়ে কুমারগঞ্জে পৌঁছে দেন। একবারে বোল্ডার সাইজের তিনটি করে গরু ভুটভুটিতে বেঁধে আনেন। পেপসি সাইজের হলে একবারে আটটি পর্যন্তও তাঁরা তুলে নেন। ইয়াকুব নিজে জানিয়েছেন সে কথা৷

গরু বোঝাই ভুটভুটিতে থাকা মহম্মদ সৈদুর নামের এক ব্যক্তি জানান, তাঁর পেশাই হল সীমান্তে গরু পৌঁছে দেওয়া৷ এই টাকাতেই তাঁক সংসার চলে৷ হাট থেকে গরু কিনে এনে রাতে সীমান্ত অবধি পৌঁছে দিলে বোল্ডার প্রতি তাঁরা ২০০ টাকা করে পেয়ে থাকেন। তবে এরপর কীভাবে কী হয় তা একমাত্র লাইনম্যানই বলতে পারবেন বলে জানান তাঁরা৷ উল্লেখ্য, এই লাইনম্যানের কাজ হল আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাচারকারীরা যাতে নিরাপদে গরু পাচার করতে পারে তার ব্যবস্থা করা৷