আগে যাচ্ছে ইজরায়েল, ‘চন্দ্রযান-২’ উৎক্ষেপণের দিন ফের পিছল


না, অক্টোবরেও নয়। চাঁদের মাটিতে পা রাখতে আমাদের দেরি হবে আরও চার মাস। বছর গড়িয়ে যাবে। আগামী জানুয়ারির শেষাশেষি চাঁদ-মুলুকে রওনা দেবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র 'চন্দ্রযান-২'। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ওই মহাকাশযানে থাকা 'ল্যান্ডার' চাঁদের মাটিতে পা ছোঁয়াবে ফেব্রুয়ারির শেষাশেষি।

প্রযুক্তিগত কারণেই পিছিয়ে যাচ্ছে ইসরোর মহাকাশযানের চাঁদ-মুলুকে পাড়ি জমানোর দিনক্ষণ। তার ফলে, চাঁদের মাটিতে পা ছোঁয়ানোর ক্ষেত্রে রাশিয়া, আমেরিকা, চিনের পর চতুর্থ দেশ হওয়ার সুযোগ হাতছুট হতে চলেছে ভারতের। কারণ, ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে চাঁদের মাটিতে পা রাখার কথা ইজরায়েলের একটি বেসরকারি সংস্থা ('স্পেসআইএল')-র পাঠানো মহাকাশযানের।

ইউ আর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারের অধিকর্তা এম আন্নাদুরাই এ কথা জানিয়েছেন।

ভারতের প্রথম চন্দ্রাভিযান হয়েছিল ১০ বছর আগে, ২০০৮ সালে। পাঠানো হয়েছিল একটি 'অরবিটার'। 'চন্দ্রযান-১। তবে সেই মহাকাশযান এত দিন ধরে শুধুই প্রদক্ষিণ করেছে চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথ। চাঁদের মাটিতে নামেনি। পক্ষান্তরে, 'চন্দ্রযান-২'-এ থাকছে একটি 'অরবিটার', একটি 'ল্যান্ডার' ও একটি 'রোভার'। 'অরবিটার'-এর যা কাজ, তা এ বারও করবে। সেটি প্রদক্ষিণ করবে চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথ। তবে 'চন্দ্রযান-২' থেকে বেরিয়ে ফেব্রুয়ারিতে এই প্রথম চাঁদের মাটিতে নামতে চলেছে প্রথম কোনও ভারতীয় 'ল্যান্ডার'। আর তার ভেতর থেকে বেরিয়ে চাঁদের মাটি চষে বেড়াতে শুরু করবে প্রথম কোনও ভারতীয় 'রোভার'। এ বছর এপ্রিলেই চাঁদ-মুলুকে পাড়ি জমানোর কথা ছিল 'চন্দ্রযান-২'-এর। কিন্তু তা পিছিয়ে যায়। ওই সময় ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভান জানিয়েছিলেন, ''অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যেই উৎক্ষেপণ হবে।''

আন্নাদুরাই জানিয়েছেন, সমস্যার মূল কারণ 'চন্দ্রযান-২'-এর ওজন। যা প্রায় ৩ হাজার ২৯০ কিলোগ্রাম। নানা রকমের যন্ত্র অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এতটা ওজন বেড়ে গিয়েছে 'চন্দ্রযান-২'-এর। তাই এত ভারী মহাকাশযানকে পিঠে চাপিয়ে মহাকাশে পাড়ি জমাতে হবে বলে ইসরো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রকেট 'জিএসএলভি-এমকে-২'-কে সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে না। বরং আরও আধুনিক, আরও শক্তিশালী 'জিএসএলভি-এমকে-৩' রকেটের পিঠে চাপিয়েই চাঁদ-মুলুকে রওনা করানো হবে 'চন্দ্রযান-২'কে। যাতে কোনও বিপত্তি না ঘটে মাঝ-আকাশে বা মহাকাশে। তা ছাড়াও বেঙ্গালুরুতে চাঁদের মাটির কৃত্রিম পরিবেশে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখে-বুঝে নেওয়ার চেষ্টা চলছে 'চন্দ্রযান-২'-এ থাকা 'রোভার' চাঁদের মাটিতে নেমে কতটা দক্ষতায় কাজ করতে পারবে। চাঁদের পরিবেশে তা সর্বাধিক কত দিন কর্মক্ষম থাকবে। আরও গবেষণার জন্য সেই 'রোভার'-এর কর্মক্ষমতা বা তার আয়ু আরও বাড়ানো সম্ভব কি না। সেই সব চূড়ান্ত হয়ে গেলেই 'চন্দ্রযান-২'-কে নিয়ে যাওয়া হবে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী শ্রীহরিকোটার উৎক্ষেপণ স্থলে।

১৯৬৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আমেরিকা ও রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের চন্দ্রাভিযান-সহ) মহাকাশচারী ছাড়া মোট ১২টি মহাকাশযান নামিয়েছে চাঁদের মাটিতে। শেষ চাঁদের মাটিতে নেমেছে চিনের মহাকাশযান 'শাঙ্গে-৩'। ২০১৩-র ডিসেম্বরে। ফলে, ৬ বছর পর ফের চাঁদের মাটিতে হবে সভ্যতার পদক্ষেপ।

ও দিকে, ইজরায়েলের বেসরকারি সংস্থা 'স্পেসআইএল'-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আইডো আন্টেবি জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে 'স্পেসএক্স'-এর 'ফ্যালকন-৯' রকেটের পিঠে চাপিয়ে চাঁদ-মুলুকে রওনা করানো হবে তাঁদের মহাকাশযানকে। যা চাঁদের মাটিতে নামবে ১৩ ফেব্রুয়ারি।